শিরোনাম
রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রবাসে তৈরি হবে দক্ষ জনশক্তি

মধ্যপ্রাচ্যে চালু হচ্ছে ৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাড়বে রেমিট্যান্স

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দিন দিন ছোট হয়ে আসছে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কমছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। বেকার হয়ে পড়ছেন অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী। এ অবস্থায় দেশের রেমিট্যান্সেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সংকট কাটিয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রবাসীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে তাদের আয় ও দেশের রেমিট্যান্স দুটোই বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রবাসীদের ‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট’র এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাইফ চেঞ্জার প্রোগ্রাম’। ইতিমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় চালু হওয়া এই প্রোগ্রাম থেকে বেশ ইতিবাচক ফল পাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের আরও ছয়টি স্থানে এই উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যারা যান তাদের বেশিরভাগই অদক্ষ শ্রমিক। কোনো কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা এবং সেখানকার ভাষা না জানায় তাদেরকে বেছে নিতে হয় কম বেতনের কাজ। মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে বেশিরভাগ বাংলাদেশি যোগ দেন বাগানের পরিচর্যা, পশু চরানো, দোকানের কর্মচারী ও কন্সট্রাকশন ফার্মের শ্রমিকের কাজে। কিন্তু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার কারণে দিন দিন এই কর্মক্ষেত্রও সীমিত হয়ে আসছে। ফলে কমে আসছে প্রবাসীদের আয়। এই অবস্থায় প্রবাসীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত বছরের ১৯ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজার বাংলাদেশ সেন্টারে চালু করা হয় দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক কার্যক্রম ‘লাইফ চেঞ্জার প্রোগ্রাম’। দুবাইর বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে ও প্রবাসী কমিউনিটি নেতাদের সহযোগিতায় চালু হওয়া এই কার্যক্রমের শুরুতেই সাড়া মিলে অভূতপূর্ব। বর্তমানে ওই সেন্টারে ছয়টি ব্যাচে প্রায় ১৮০ জন প্রবাসীকে কম্পিউটার, ড্রাইভিং এবং ইংরেজি ও আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ৪-৬ মাসব্যাপী এই প্রশিক্ষণ শেষে অদক্ষ শ্রমিকরা কাজ শিখে নতুন পেশায় যোগ দিতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত প্রবাসী কমিউনিটি নেতা কায়েস চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘লাইফ       চেঞ্জার প্রোগ্রাম’ সেন্টারে প্রতি শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন প্রবাসীরা এসে প্রশিক্ষণ নেন। দিন দিন প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রশিক্ষণের চাহিদাও বাড়ছে। বর্তমানে ৩০ জন করে ছয়টি ব্যাচে তিন ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, মধ্যপ্রাচ্যে একজন অদক্ষ শ্রমিক বাগান পরিচর্যা, পশু চরানো বা কন্সট্রাকশনের কাজ করে যে টাকা আয় করেন তার চেয়ে ৭-৮ গুণ বেশি টাকা আয় করতে পারেন গাড়ি চালিয়ে। কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা পেশা পরিবর্তন করতে পারেন না। অনেকে আরবি বা ইংরেজি ভাষা না জানায় ভালো কাজও করতে পারছেন না। মধ্যপ্রাচ্যও দিন দিন তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেলেও আমাদের শ্রমিকরা কম্পিউটার চালানো না জানায় সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না। এসব বিষয় বিবেচনা করে প্রবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে শারজার বাংলাদেশ সেন্টারে ‘লাইফ চেঞ্জার প্রোগ্রাম’ চালু করা হয়েছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রবাসীদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা গেলে তাদের আয়ের সঙ্গে দেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে। মন্ত্রী জানান, শুরুতেই প্রবাসীদের কাছ থেকে যেভাবে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে তা অকল্পনীয়। শারজার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব, ওমান, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি স্থানে এরকম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর চিন্তাভাবনা চলছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর