প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অনুমোদনের পরই পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সব মিলে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ সবার সমন্বয়ে কমিটি করার চেষ্টা করেছি। তবে কমিটি অনুমোদনের আগেই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। দলীয় হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রে অনুমোদনের জন্য পাঠানো কমিটিতে মোট ১১ জন সহসভাপতি, তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এক নম্বর সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন হাটহাজারীর অধ্যাপক মঈনুদ্দিন। সহসভাপতি পদে দুজনের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ ও রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, রাঙ্গুনিয়া থেকে দুজন, ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে দুজন, সীতাকু- থেকে একজন, মিরসরাই থেকে দুজন এবং সন্দ্বীপ থেকে একজন। এ ছাড়া তিনজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের তালিকায় মিরসরাইয়ের নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বাহার, এরপর দেবাশীষ পালিত ও জসীমউদ্দিন শাহ, তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপিসহ বেশ কয়েকজনের নামও রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সুস্থ থাকলে প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য তার হাতে কমিটি জমা দেওয়া হতো। এখন দলের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার কাছে কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কমিটির মতো দলের নেতৃতে এবার উত্তর জেলার কমিটিতেও নতুন ‘চমক’ আসতে পারে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়া নতুন এই কমিটিতে কারা আসছেন, সেই বিষয়েও তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝে নানা গুঞ্জন চলছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদেও আসতে পারে নতুন মুখ। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, দলের যুগ্ম-সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের কাছেও লবিং-তদবির ছিল লক্ষ্যণীয়। তবে আলোচনায় ত্যাগী, যোগ্য, নির্যাতিত এবং আদর্শিক নেতারাই মূল্যায়ন হতে পারেন বলে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামকে সভাপতি ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন কাউন্সিলররা। উত্তর জেলার সম্মেলন ও কাউন্সিল হলেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ নানাবিধ কারণে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন করেছেন, ঠিক তেমনিভাবেই চট্টগ্রাম উত্তর জেলাসহ জেলার প্রতিটি কমিটিতেও বিতর্কিত, অযোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল একটি কমিটি উপহার দিতে কাজ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পর ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম চৌধুরী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। গত ২৭ জানুয়ারি নুরুল আলম চৌধুরীর মৃত্যুর পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাউজানের টানা চারবারের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম। গত ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ সালামকে সভাপতি ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছেন কাউন্সিলররা।