সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বাদ পড়তে পারেন ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ কাউন্সিলররা

আলোচনায় সাবেক ছাত্রনেতা, ক্লিন ইমেজধারী, ত্যাগীরা

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

বাদ পড়তে পারেন ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ কাউন্সিলররা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে নতুন চমকের পর এবার আলোচনা চলছে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নিয়ে। কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদেও বাদ পড়তে পারেন নানা কারণে ‘প্রশ্নবিদ্ধ বা বিতর্কিত’ কাউন্সিলররা। কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ থেকে কারা পাচ্ছেন মনোনয়ন, সেসব বিষয়ে আরও বেশি আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে। এক ডজনেরও বেশি বর্তমান কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর এবার দলীয় মনোনয়নপত্র পাচ্ছেন না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। দলের জন্য ত্যাগী, ক্লিন ইমেজ, যোগ্যতাসম্পন্ন, নির্যাতিত এবং যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতা মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। আজ দলের মনোনয়ন বোর্ডের তরফ থেকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে পুরনো ও নতুন কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজসহ নানা কারণে বিতর্কিত ছিলেন এমন একাধিক কাউন্সিলর বাদ পড়েছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অনেক বছর ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন আসফাক আহমেদ, যিনি পাথরঘাটা ওয়ার্ড থেকে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছেন। তিনি এবার দল থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে প্রায় নিশ্চিত করেছেন অনেকেই। এ ছাড়া রাস্তা দখল, আধিপত্য বিস্তার, চসিকে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলিসহ নানা কারণে বিতর্কিত বর্তমান কাউন্সিলর বক্সির হাট ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজি নুরুল হক, শৈবাল দাশ সুমন, হালিশহরের জিয়াউল হক সুমন, পাহাড়তলীর তৌফিক আহমেদ, পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন হিরণ, পাঠালতলীর আবদুল কাদেরসহ (মাছ কাদের) আরও বেশ কয়েকজন। অন্যদিকে দলের জন্য ত্যাগী, নির্যাতিত, যোগ্যতাসম্পন্ন, ক্লিন ইমেজ ও রাজনীতির মাঠে সক্রিয় এমন যুবলীগ ও সাবেক ছাত্রলীগের নেতারাও আলোচনায় আছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের নগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক, ফরহাদুল ইসলাম রিন্টু, আজিজুর হমান আজিজ, ইলিয়াছ উদ্দিন, ইয়াছিন আরাফাত, ফয়সাল বাপ্পী। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন যুবনেতা আবদুল মান্নান ফেরদৌস, নুরুল আনোয়ার, নুরুল আলম মিয়া, আশীষ ভট্টাচার্য, হেলাল উদ্দিন, আতিকুল ইসলাম, শহিদুল হোসেন খান মাসুক, আমিরুল ইসলাম ও ফারুক আহমেদসহ অনেকেই। একইভাবে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকেও নিষ্ক্রিয় অনেক নেতা দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দল থেকে যে-কেউই মনোনয়নপত্র চাইতে পারেন। কে যোগ্য, কে অযোগ্য, তা বিবেচনা করবে মনোনয়ন বোর্ড। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্ররাজনীতি করেছি। আমি দলের তারুণ্যদীপ্ত নতুন প্রজন্মকে গতিশীল করতে দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। কেন্দ্রীয় ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ‘মনোনয়ন পেলে আমি আমার ওয়ার্ডকে পরিচ্ছন্ন, সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত ও উন্নয়নমুখী ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলব।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, একাধিক বিতর্কিত বর্তমান কাউন্সিলর রয়েছেন চট্টগ্রামে। এদের অনেককেই এবার দলীয় মনোনয়ন বোর্ড বাদ দিতে পারে। এখানে যোগ্য, ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজের অনেকের নাম উঠে আসছে। তবে প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে কাউন্সিলর পদে দলের প্রার্থী ঘোষণা আসতে পারে বলে জানান তারা।

দলীয়, দুদক ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন পেতে কাউন্সিলর পুরুষ-মহিলা পদের জন্য ৪০৬ জন মনোনয়ন চেয়েছেন। দলের মনোনয়ন বোর্ড এই ৪০৬ জন থেকে চূড়ান্তভাবে সংরক্ষিতসহ প্রতি ওয়ার্ড থেকে একজন করে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে। কিন্তু এখানে দলের ভিতরে বর্তমান কাউন্সিলর ও নতুন একাধিক প্রার্থীর বিষয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। তাদের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দলীয় ফরম সংগ্রহের খবর ছড়িয়ে পড়ায় নিজ নিজ এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এখনো চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। বিতর্কিতদের মধ্যে রয়েছেন দখলদার, সন্ত্রাসী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, রোহিঙ্গা নাগরিককে জন্মসনদ দেওয়া, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া, মাদক ব্যবসায়ী, টেন্ডারবাজ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকারী। তবে এখানে অনেকের বিরুদ্ধে জমি দখল, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা কারণে দুদকের তদন্ত চলছে। এ ছাড়া অনেকের বিষয়ে রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর