অযত্ন-অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছে জাতীয় ঐতিহ্যের স্মৃতিবাহী লাকসাম নওয়াববাড়ি। ব্রিটিশ কারুকার্যে নির্মিত ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব ও নারী আন্দোলনের প্রথম অগ্রদূত নবাব ফয়জুন্নেছার এ বাড়িটি চমৎকার একটি স্থাপত্য, যা দক্ষিণ এশিয়ার সৌন্দর্যমন্ডিত বাড়িগুলোর অন্যতম। বছরের পর বছর অরক্ষিত থাকলেও সাম্প্রতিক বাড়িটিকে আকর্ষণীয় প্রত্নপর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বরাদ্দ পেলেই পাল্টে যেতে শুরু করবে বাড়িটি। সৌন্দর্যমন্ডিত এ বাড়িটিকে ঘিরে দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। কুমিল্লার লাকসাম পৌর শহরের পশ্চিমগাঁও এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেঁষে ঐতিহাসিক নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ির (নওয়াববাড়ির) অবস্থান। ঐতিহ্যের ধারক বাড়িটির নির্মাণ সাল নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কথিত আছে, উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বিয়ের ১৭ বছর পর তিনি জানতে পারেন তার স্বামী হাছান আলী জমিদারের আরেক স্ত্রী রয়েছেন। অসাধারণ ব্যক্তিত্ববান, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, দৃঢ়চেতা নবাব ফয়জুন্নেছা এটি মানতে পারেননি। তিনি আলাদাভাবে থাকার জন্য সাড়ে তিন একর জমির ওপর তার বিয়ের কাবিনের ১ লাখ ১ টাকা দিয়ে এই স্থাপনাটি নির্মাণ করেন। নির্মাণ করতে প্রায় ৩ বছর সময় লাগে। বাড়ির পশ্চিম পাশেই ১০ গম্বুজবিশিষ্ট অনিন্দ্য স্থাপত্যশৈলীর পারিবারিক মসজিদ রয়েছে। মসজিদের পাশেই পারিবারিক কবরস্থান, যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন নবাব ফয়জুন্নেছাসহ তার পরিবারের অন্যান্য বংশধর। নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন। তিনি এ বাড়িটিতে বসে পর্দার আড়াল থেকে সব বিচারকার্য সম্পাদন, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-মাদ্রাসাসহ যাবতীয় জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। কালের বিবর্তনে বাড়িটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। নবাব ফয়জুন্নেছা মৃত্যুর পূর্বে বাড়িটি সরকার বরাবর ওয়াকফ করে যান। জাতীয় ঐতিহ্যের স্মৃতিবাহী স্থাপনাটি বছরের পর বছর অযত্ন, অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পড়ে। বাড়ির পাশে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ, গাছপালা, বাগান কিছুই তেমনটা চোখে পড়ে না। ভবনের চারপাশ দেখতে অপরিচ্ছন্ন। চুন-সুরকি-ইট-পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা-জানালা ভেঙে পড়ছে। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বাড়িটি যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ বাড়িটিকে ঘিরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, নওয়াব বাড়িকে আকর্ষণীয় প্রত্নপর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর পরই সংস্কার কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রত্নপর্যটনে লাকসাম হবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান।