রংপুরে করোনা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মানুষ। প্রতিদিনই বাইরের জেলা থেকে আসছে মানুষ। এসব মানুষ জনসমাগমে মিশে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করছেন।
রংপুরের ৮ উপজেলায় ৫ লাখের ওপর মানুষ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্নস্থানে কাজ করেন। এর মধ্যে অধিকাংশই কর্মজীবী। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পোশাক তৈরি ও অন্যান্য কারখানায় কাজ করেন।
সম্প্রতি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য এসব জেলায় অন্য এলাকার কর্মরত মানুষকে বাড়ি ফিরতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তারা শুনছেন না। বিশেষ করে মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ উপজেলার শ্রমজীবী মানুষ ঘরমুখী হচ্ছেন। প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ গ্রামে ঢুকছেন।সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তারা বাড়িতে এসে হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন। অন্য জেলা ফেরত এসব ব্যক্তিরাই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে করোনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
মিঠাপুকুর উপজেলার ময়েনপুর ইউনিয়নের ময়েনপুর শাহাপাড়া গ্রামের এক যুবক ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। তিনি এলাকায় অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। এর প্রতিবাদ করায় প্রতিবেশীকে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। রংপুরে ৮ উপজেলায় প্রতিদিনই শত শত মানুষ ঢাকা নারায়ণগঞ্জ থেকে রংপুর আসায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে মিঠাপুকুর উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের বুজরুক ঝালাই খন্দকারপাড়া গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সে সদ্য সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার পর করোনা আতঙ্কের মাঝেও তার নানার বাড়ি নারায়নগঞ্জ জেলায় বেড়াতে যায়। সেখানে ইতালি ফেরত এক মামার সাথে দেখা করে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসে। কিছুদিন আগে জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে ৪র্থ দফায় তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত ৮ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে।
এ ঘটনায় সংক্রমিত স্কুলছাত্রের বাড়িসহ ১৬টি বাড়ি লকডাউন করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া, উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের ইকবাল হোসেনের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম (২৮) করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তার স্বামী গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় একটি ওষুধ কোম্পানীতে চাকরি করেন।
সম্প্রতি মোর্শেদার শ^াসকষ্ট শুরু হয়। কালিয়াকৈরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়। ইকবাল হোসেন এম্বুলেন্সে করে স্ত্রীর মরদেহ মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী ও চিকিৎসকদের মাঝে আতঙ্ক তৈরী হয়। করোনাভাইরাসে মোর্শেদা মারা গেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়।