বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে আইসিইউ কাগজে কলমে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে আইসিইউ কাগজে কলমে

এক মাসের বেশি সময় পার হলেও দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় অতি প্রয়োজনীয় আইসিইউ স্থাপনের প্রস্তুতি কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। পক্ষান্তরে আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) না থাকায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনা সবাইকে ব্যথিত করেছে। জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর পরই চট্টগ্রামে এ চিকিৎসায় অতিজরুরি আইসিইউ না থাকার বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে। এরপর গত ৩০ মার্চ সরকার জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড বরাদ্দ দেয়। গতকাল পর্যন্ত এগুলো প্রস্তুত হয়নি। পক্ষান্তরে চট্টগ্রামের করোনা প্রতিরোধ বিভাগীয় কমিটি গত ৪ এপ্রিল নগরের ১২টি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এ ১২ হাসপাতালের সঙ্গে চূড়ান্ত কোনো কথা না হওয়ায় সেখানে কোনো রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পার হলেও চট্টগ্রামে এখনো আইসিইউ শয্যা না থাকাটা বিস্ময়কর বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। চট্টগ্রামে করোনা রোগীরে জরুরি চিকিৎসায় আইসিইউ প্রস্তুতি কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। ইচ্ছা থাকলেও চিকিৎসকরা সেবা দিতে পারছেন না। তাছাড়া বড় প্রশ্ন হয়ে আছে জেনারেল হাসপাতালে গত তিন বছর ধরেই পড়ে থাকা আটটি আইসিইউ শয্যা ব্যবহার নিয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতা। প্রশ্ন উঠেছে চট্টগ্রাম করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় কতটুকু প্রস্তুত? অভিযোগ আছে, গত সোমবার নগরের সরাইপাড়া এলাকার এক নারী এবং গত রবিবার রাতে মারা যায় পটিয়ার ছয় বছর বয়সী এক প্রতিবন্ধী শিশু। শ্বাসকষ্ট থাকায় দুজনেরই আইসিইউ সেবা জরুরি হয়ে ওঠে। তাছাড়া নারী রোগীকে স্বজনরা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকায় প্রাইভেট হাসপাতালেও নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে ভর্তি করা হয়নি। পরে তিনি মারা যান। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু ও ২৮ জন শনাক্ত হয়েছে। তারা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে রয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জেনারেল হাসপাতালের ১০০ শয্যা এবং ৫০ শয্যার বিটিআইডিআইটিতে। আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ‘জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। অথচ এখানেই নেই আইসিইউর ব্যবস্থা। ফলে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়েও আইসিইউ সাপোর্ট না থাকায় দুজন রোগী মারা যান।  তাছাড়া নগরের ১২টি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে তাও পুরোটাই প্রতারণা। কারণ আমরা নিজেরাই পার্কভিউতে গিয়েও সাড়া পাইনি। তাই বেসরকারি হাসপাতালগুলোর শয্যা ব্যবহারের কথাগুলো কেবলই বলার জন্য বলা। মানুষকে মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়া।’ নাম প্রকাশ না করে জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের এক নার্স বলেন, ‘ভর্তি থাকা অনেক রোগীরই আইসিইউ সেবা দরকার। এখন জরুরি এ সেবা ছাড়াই চলছে চিকিৎসা।’

 করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়কারী ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘করোনা রোগীদের আইসিইউ অতিজরুরি।

কিন্তু প্রায় দেড় মাস হলেও চট্টগ্রামে এ জরুরি চিকিৎসার প্রস্তুতি কাগজে-কলমে। সব প্রস্তুতি মুখে মুখে। বেসরকারি ১২টি হাসপাতালের নাম বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই তাদের হাসপাতালে রোগী ভর্তি না করার বিষয়টি পরিষ্কার। তাছাড়া হাসপাতালগুলো তাদের আইসিইউ ব্যবহার করতে দেবে কিনা সেটাও প্রশ্ন।’ তিনি বলেন, ‘করোনা চিকিৎসা নিয়েও চলছে তুঘলকি সব সিদ্ধান্ত। তিন বছর ধরে পড়ে থাকা আটটি আইসিইউ ব্যবহারের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুনগুলোর আসা এখনো সময় সাপেক্ষ। তাহলে কী দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হবে? এমনটি হলে চোখের সামনেই মৃত্যুর ঘটনা দেখতে হবে সবাইকে।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘করোনায় মৃত নারী মেডিকেল থেকে জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু কাগজে বেসরকারি হাসপাতোলে পাঠানোর বিষয়টি পাইনি। হয়তো রোগীর স্বজনরা নিজেরা সেখানে নিয়ে যেতে পারেন। জেনারেল হাসপাতাল রোগীর জন্য আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন মনে করলে তারাই রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠাবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনা প্রকোপের শুরু থেকেই আইসিইউ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। তাছাড়া বেসরকারি হাসপাতালেও রাখা হবে। আশা করি সংকট হবে না।’

জানা যায়, গত ৪ এপ্রিল আইসিইউ আছে এমন নগরের বেসরকারি ১২টি হাসপাতালে জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় করোনা প্রতিরোধ বিভাগীয় কমিটি। পর্যায়ক্রমে চার দফায় ১২টি হাসপাতালে শয্যা দেওয়ার কথা। কিন্তু এসব হাসপাতালের চূড়ান্ত কোনো চুক্তি না হওয়ায় সেখানে কোনো রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, জেনারেল হাসপাতালে প্রক্রিয়াধীন আইসিইউ চালু এখনো সময়সাপেক্ষ। অথচ সংকটাপন্ন করোনো আক্রান্ত রোগীকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে কৃৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস সেবা দিতে আইসিইউ অতিজরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর