শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

দূর যাত্রার জন্য চট্টগ্রামে ছলচাতুরী

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কোনোভাবেই থামছে না এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভয়ঙ্কর যাত্রা। ট্রাকের ওপর ত্রিপল বেঁধে, কাভার্ডভ্যানসহ গাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যানার লাগিয়ে চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে লোকজন। আবার আসছেও ঠিক অভিন্ন কায়দায়।  বিশেষজ্ঞদের মত, ভয়ঙ্কর যাত্রা ও অযথা ঘোরাঘুরি রোধ করতে না পারলে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়া-আসা রোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যারা অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন।’ 

সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘করোনা প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি পেতে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী থাকা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া-আসা এবং অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা করার ফল ভালো হবে না। এসব রোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জ্যামিতিক হারে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এটা রোধ করতে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব খুবই জরুরি।’ জানা যায়, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকার গণপরিবহন বন্ধ রাখার কারণে সারা দেশের সঙ্গে চট্টগ্রামে যোগাযোগ একপ্রকার বন্ধ রয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, কাভার্ডভ্যান এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পরিবহনে নিয়োজিত এমন ব্যানার টাঙিয়ে চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে লোকজনকে।

আবার দেশের অন্য জায়গা থেকেও লোকজনকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসছে। গত কয়েকদিন রাতের আঁধারে ট্রাকে করে দেশের অন্য জায়গায় যাত্রী পরিবহনের সময় কয়েকটি গাড়িকে আটকে দিয়েছে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন। গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েকজনকে। ভয়ঙ্কর যাত্রার পাশাপাশি চলছে অযথা ঘোরাঘুরির ঘটনাও। নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় লোকজন হোম কোয়ারেন্টাইন ভেঙে অযথা ঘোরাফেরা ও আড্ডাবাজির অভিযোগ উঠেছে। বাইরে অযথা ঘোরাফেরা করায় গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু নগরীতে ৬৭ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।

ট্রাকে করে চট্টগ্রাম জেলা থেকে অন্য জেলায় লোক নেওয়ার সময় একটি ট্রাক ও আরেকটি মাক্রোবাস আটক করেছে নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশ। ওই থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘কয়েকটি চক্র শহরে থাকলে করোনায় আক্রান্ত হবে এমন গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। পরে তারাই লোকজনকে ট্রাকে করে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে নিচ্ছে। এ দুটি ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের প্রচেষ্টা চলছে।’

বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৭ জন করোনা রোগী চিহ্নিত হয়েছেন। যার মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৮ জন করোনা রোগী চিহ্নিত হয় জেলার সাতকানিয়া উপজেলায়। এ ছাড়া সীতাকু-ে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন। ধারণা করা হচ্ছে, এ ৯ জনের আক্রান্ত হওয়ার পেছনে নারায়ণগঞ্জ কানেকশন রয়েছে। নগরীতে যে ১৬ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে তার মধ্যে বেশির ভাগই আক্রান্ত হওয়ার সংযোগ পাওয়া যায়নি। নগরীর সরাইপাড়া হাক্কানি পেট্রল পাম্পের যে চারজনের মধ্যে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে তাদের নারায়ণগঞ্জ কিংবা ঢাকা থেকে আসা  কোনো পরিবহন শ্রমিকের কানেকশন থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর