রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্দরে ভয়াবহ কনটেইনার জট

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

বন্দরে ভয়াবহ কনটেইনার জট

ভয়াবহ কনটেইনার জট শুরু হয়েছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে। এখানে এখন কনটেইনার রাখার জায়গা নেই। ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। ৪৯ হাজার ১৮টি কনটেইনার ধারণক্ষমতার এ বন্দরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কনটেইনার ছিল ৪৯ হাজার ৪১০টি। এ ছাড়া বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ রয়েছে আরও ৩৬টি কনটেইনারবাহী জাহাজ এবং বন্দর জেটিতে ১০টি কনটেইনারবাহী জাহাজে খালাস চলছে। কনটেইনার জটের এ ভয়াবহতা থেকে উদ্ধারের উপায় হিসেবে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এখন বন্দর ব্যবহারকারীরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করলেই এ জট কমে আসবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিরা। বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভয়াবহ এ জট থেকে বন্দরকে রক্ষার জন্য আমদানিকারকদের কনটেইনার ডেলিভারি নিতে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারি কনটেইনার ডিপোতে নির্ধারিত পণ্যতালিকার বাইরে নতুন পণ্য খালাসের অনুমোদন, কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনাল থেকে ডেলিভারি বাড়িয়ে সেখানে কনটেইনার স্থানান্তর, ঢাকার এসএপিএল ডিপোতে কনটেইনার রাখার অনুমোদনসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সহযোহিতা চাওয়া হয়েছে। মূলত করোনার প্রভাবে সারা দেশে লকডাউন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বন্দর থেকে আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার ডেলিভারি আশঙ্কজনকভাবে কমে গেছে। ফলে একদিকে দেখা দিয়েছে তীব্র কনটেইনার জট এবং অন্যদিকে বন্দরে আসা নতুন কনটেইনারবাহী জাহাজ থেকে স্থান সংকুলানের অভাবে যথাসময়ে কনটেইনার নামানো যাচ্ছে না। এতে একেকটি জাহাজকে বন্দরেই থাকতে হচ্ছে অতিরিক্ত ৮-১০ দিন। এ অপেক্ষমাণ সময়গুলোতে প্রতিদিন ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বাবদ বড় অঙ্কের ব্যয় বহন করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। দিনশেষে যা উঠবে সাধারণ ভোক্তাদের ঘাড়ে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের এ কনটেইনার জট লাঘবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে গত ১৪ এপ্রিল নগরীর সার্কিট হাউসে বন্দর ব্যবহারকারীদের নিয়ে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বন্দরের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে রপ্তানি পণ্য আসা কমে যাওয়ায় ১৫ হাজার কনটেইনার রাখা যেতে পারে বলে একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এর জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, বিকডার সমন্বিত উদ্যোগ দরকার বলে জানানো হয়। বন্দরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

পাশাপাশি করোনাকালে আসা আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনারে ‘স্টোররেন্ট’ মওকুফসহ নানা সুবিধা দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে বন্দরের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শেখ আবুল কালাম আজাদ বলেন, জাতীয় স্বার্থে দেশপ্রেম নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে দ্রুতই সৃষ্ট কনটেইনার জট নিরসন হবে।

বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, বন্দরে কনটেইনার ধারণক্ষমতার বেশি হয়ে গেছে। এ মুহূর্তে বন্দর থেকে কনটেনার ডেলিভারির বিকল্প নেই। দেশের এ ক্রান্তিকালে বন্দরকে সচল রাখতে হলে আমদানিকারদের এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে যেখানে ৩-৪ হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হতো তা করোনা পরিস্থিতির এ সময়ে এক চতুর্থাংশে নেমে এসেছে। যে জট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমদানিকারককে কনটেইনার ডেলিভারিতে হয় বাধ্য করতে হবে নয়তো বাড়তি কনটেইনার রাখার জন্য বন্ডেড (নিরাপদ) ইয়ার্ড, টার্মিনাল বা জায়গা খুঁজে বের করতে হবে।

তিনি বলেন, পণ্য আমদানি করে কেন ডেলিভারি নিচ্ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। বাধা থাকলে সেগুলো দূর করতে হবে। নয়তো এলসি খোলা ব্যাংক ও সরকারকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। বন্দর সচল রাখা শুধু জাতীয় কর্তব্য নয়, এর সঙ্গে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে দেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। একটি ছোট, মাঝারি কনটেইনার জাহাজকে যদি বন্দরে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় তবে জাহাজ মালিক পরের বার এ রুটে জাহাজ ভাড়া দেবে কি না ভাববে।

চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির হৃৎপি  উল্লেখ করে বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ বলেছেন, স্টেক হোল্ডারদের নিজস্ব ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। বন্দরের কনটেইনার জট কমাতে হবে।

কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, রপ্তানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বিলাসবহুল বাণিজ্যিক পণ্য আমদানি ছাড়ে কিছুটা বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু নিত্যপণ্য, ফল, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, কৃষি উপকরণ ছাড় হচ্ছে। এখন প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি ডকুমেন্ট সাবমিট হচ্ছে।

বন্দরের স্টোর রেন্টের মতো শিপিং এজেন্টের ডেমারেজ চার্জ মওকুফ, বেসরকারি আইসিডি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার দাবি জানান বিজিএমইএর পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর