এখনো রহস্যে ঘেরা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এম. ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান। দীর্ঘ আট বছরেও হদিস মিলেনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এই সাবেক সাধারণ সম্পাদকের। কিনারা হয়নি নিখোঁজ রহস্যের। ইলিয়াস আলী কোথায়? এত দিনেও এর উত্তর জানাতে পারেনি কেউ। দীর্ঘদিনেও সুরাহা না হওয়ায় চরম হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মানুষ। প্রশ্ন তুলেছেন, অন্তরালেই কি থেকে যাবে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের রহস্য? পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালকসহ নিখোঁজ হন তৎকালীন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য। হোটেল রূপসী বাংলায় আড্ডা শেষে বাসায় ফিরছিলেন ইলিয়াস। মহাখালী সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে মধ্যরাতে কে বা কারা উঠিয়ে নেয় তাদের। পরদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকার উদ্ধার করে পুলিশ। খবর ছড়িয়ে পড়লে উদ্ধার আন্দোলন ফুঁসে ওঠে দেশজুড়ে। প্রাণ দেন তার নিজ উপজেলা সিলেটের বিশ্বনাথের একাধিক কর্মী-সমর্থক। দলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের উদ্ধার চেয়ে টানা কর্মসূচি দেয় বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছুটে যান তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। প্রশাসনও চালায় উদ্ধার অভিযান। এক পর্যায়ে হাই কোর্টে রিটও করেন তিনি। পিতাকে ফিরে পেতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারিকে চিঠি দেন ইলিয়াস কন্যা সাইয়ারা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেশবাসীর কাছে ‘ইলিয়াসকে ভিক্ষা চান’ মা সূর্যবান বিবি। এক সময় ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে যায় ইলিয়াস ‘নিখোঁজ রহস্য’ উন্মোচনের সব প্রক্রিয়া। কেটে যায় বছরের পর বছর। এখন আর এ নিয়ে কথা বলেন না কেউ। বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, আট বছরেও বিষয়টির সঠিক সমাধান দিতে সবাই ব্যর্থ। সরকার চাইলে আমাদের প্রিয়নেতাকে ফিরিয়ে দিতে পারে। বিষয়টি আর না গড়িয়ে চলমান পরিস্থিতি ও মানবিক বিবেচনায় ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। জানতে চাইলে ইলিয়াস আলীর বড় ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস অর্ণব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাবা নিখোঁজের পর সাধারণ ডায়েরি ও রিট পিটিশন নিয়ে কিছুদিন তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে অদৃশ্য কারণে থমকে যায় সব। গুম হওয়া অনেকেরই ফেরার নজির রয়েছে। বাবা সম্পর্কে এখনো কোনো নেতিবাচক কথা শুনিনি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস বাবা আছেন। সম্প্রতি সরকার অনেক মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে।
আমরা আবারও সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আকুতি জানাচ্ছি, রাজনৈতিক মতানৈক্য ভুলে আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।’