মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

হালদায় রেকর্ড পোনা সংগ্রহের সম্ভাবনা

সুদিনের অপেক্ষায় সংগ্রহকারীরা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

হালদায় রেকর্ড পোনা সংগ্রহের সম্ভাবনা

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে দূষণের প্রধান উৎস হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট ও বেসরকারি এশিয়ান পেপার মিল। প্রায় এক বছর আগে এ দুটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত দেড় বছর ধরে কঠোর নজরদারিতে আছে উপজেলা প্রশাসনের। মা-মাছের পোনা দেওয়ার কাছাকাছি সময় প্রায় এক মাস ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কমছে অবৈধ জাল ফেলা। ফলে এবার হালদা নদীতে পোনা সংগ্রহকারীরা সুদিনের প্রত্যাশা করছেন। রেকর্ড পরিমাণ পোনা সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে। অনুকূল পরিবেশ-প্রকৃতির ফলে হালদা গবেষকরাও অভিন্ন প্রত্যাশা করছেন। জানা যায়, ১৯ মাস ধরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন কঠোর নজরদারিতে রেখেছে হালদা নদীকে। গভীর রাতেও পরিচালিত হয়েছে অভিযান। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১০১টি অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় জব্দ করা হয় ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু ও ২ লাখ ১৩ হাজার মিটার জাল। ধ্বংস  করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত নয়টি ড্রেজার ও ১২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। জব্দ করা হয় ৩ দশমিক ৫ মিটার পাইপ। এ ছাড়া ৯০ হাজার টাকা জরিমানা ও কারাদ- দেওয়া হয় তিনজনকে। নিলামে বিক্রি করা হয় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বালু। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘গত ১৯ মাসে হালদার দূষণ প্রশ্নে কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। জাল বসানোর খবর পেলে গভীর রাতেও অভিযান চালিয়েছি। লক্ষ্য একটাই- কোনো প্রশ্ন ছাড়াই হালদাকে বাঁচাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, এশিয়ান পেপার মিল, পৌরসভা এলাকার বর্জ্য পড়া, ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং ড্রেজার বন্ধ করার কারণে বর্তমানে হালদার পরিবেশ অনেক ভালো। তাই আগামী মৌসুমে ডিম উৎপাদনে আশার আলো দেখছি।’ হালদার পোনা সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, ‘গত দেড় বছরে হালদায় প্রকৃতির মূল পরিবেশ ফিরে এসেছে। নদীর পানি দেখে বোঝা যাচ্ছে দূষণ কমেছে। তাই আমরা প্রায় ৬০০ ডিম সংগ্রহকারী এবার নতুন আশা নিয়ে পোনা আহরণের অপেক্ষায় আছি।’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘অতীতের চেয়ে এ বছর হালদার পরিবেশ ও পানির অবস্থা ভালো। তাই আগামী মৌসুমে হালদায় ডিম আহরণে নতুন রেকর্ড সৃষ্টির আশা করছি।’

জানা যায়, হালদা নদী রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ ও কার্প-জাতীয় মাছ প্রজনন ক্ষেত্র। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে মাছ প্রচুর ডিম ছাড়ে। স্থানীয়দের মতে, মুষলধারে বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, বজ্রপাত ও অমাবস্যা বা পূর্ণিমা (স্থানীয় ভাষায় তিথি বা জো) এসব একসঙ্গে থাকলে মা-মাছ প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে নমুনা ডিম ছাড়ে। এরপর পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে পুরো ডিম ছাড়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর