শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বাঘ ও চিত্রাহরিণের অবাক সুন্দরবন

মোস্তফা কাজল

বাঘ ও চিত্রাহরিণের অবাক সুন্দরবন

সদ্য জন্ম নেওয়া শাবকসহ বিশ্ববিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা যায় কটকায়। চিত্রাহরিণের দল ঘুরে বেড়ায় সুন্দরবনের করমজল এলাকার নদীর তীরে। রেসাস বানর আপন মনে হাড়বাড়িয়ায় বড় গাছের ডালে ডালে আনন্দ নাচন করছে। জলের বাসিন্দা লোনাপানির কুমির পশুর নদীর ডাঙায় রোদ পোহাচ্ছে। এ হচ্ছে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বর্তমান চিত্র। পৃথিবীর একক বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ বন দেখতে সারা বছরই থাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়। বন ঘিরে থাকে জেলে, মৌয়ালসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর আনাগোনা। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ২১ মার্চ থেকে সুন্দরবনে পর্যটক ভ্রমণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বন বিভাগ। ফলে প্রায় দুই মাস সময়ে এ বনে দেশি-বিদেশি কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। জেলে প্রবেশের অনুমতিও রয়েছে স্থগিত। বনের ভিতর নেই মানুষের কোলাহল। নেই নৌযান চলাচলের বিকট শব্দ। এ অবস্থায় নদী ও খালের চরাঞ্চলে দেখা মিলছে বাঘ, হরিণ, বানর, বনমোরগ, শজারু, সাপ, পাখিসহ নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর। নদী ও খালে ভেসে বেড়াচ্ছে কচ্ছপ, কুমির, শুশুক, ডলফিনসহ নানা জলজ প্রাণী। এ যেন নতুন এক সুন্দরবন। প্রাণিকুলের পাশাপাশি ভিন্ন আমেজ ও সজীবতায় ফিরেছে বনের বৃক্ষলতা। জেগে উঠেছে এ বনের প্রকৃতি। আর এভাবে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে সুন্দরবন। এমন তথ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন বন অধিদফতরের সহকারী প্রধান বন কর্মকর্তা জাহিদুল কবির। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরের নদী পার হয়ে কয়েকটি হরিণ লোকালয়ে এসে ধরা পড়েছে। এমনকি এক বাঘিনীকে সঙ্গে চার শাবক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন অনেকে। এ বন কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ বন প্রায় ৪৫০ নদী-খালে বেষ্টিত। বনে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়াসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। রয়েছে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রাহরিণ, কুমির, বানরসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ উভচর প্রজাতির আবাসস্থল সুন্দরবন। এত দিন সরকারি-বেসরকারি নানামুখী তৎপরতা ও উদ্যোগ নেওয়া হলেও মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায়নি বনের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। ফলে মানুষের কারণে এ বনে যেসব প্রাণীর অহরহ দেখা মিলত না, এখন পর্যটকবিহীন সুন্দরবনে সেসব প্রাণীর ছোটাছুটি আর কোলাহল চোখে পড়ার মতো। নদী-খালের চরাঞ্চলে নির্ভয়ে বিচরণ করছে হরিণ, বানর, বনমোরগ, শূকরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। শিকারের সন্ধানে ছুটে চলছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এমনকি বাঘ অধ্যুষিত অঞ্চল কটকা ও কচিখালীতে শাবকসহ বাঘিনীকে আপন মনে ঘুরে বেড়াতে দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিষাক্ত সাপ, কাঁকড়া ও হরেক রকম পাখির আনাগোনা বেড়েছে। এমনকি দূর থেকেও পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়। এ ছাড়া নদীর বাঁকে শিকারের অপেক্ষায় ওত পেতে আছে লোনাজলের রাক্ষুসে কুমির। মনুষ্যকুলের কোলাহল থেকে আড়ালে থাকা ম্যানগ্রোভ বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন ভিন্নরূপে সেজেছে। নদীর মোহনায় দেখা মিলছে শুশুক ও ইরাবতী ডলফিন বিচরণের। সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, চকিখালী ও হিরন পয়েন্ট এলাকা এখন পর্যটকশূন্য। করমজল ইকোট্যুরিজম ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের সহকারী বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, পর্যটক না আসায় সুন্দরবনের প্রাণীদের মধ্যে নতুন জীবন দেখা যাচ্ছে। দুর্লভ প্রাণীদেরও দেখা মিলছে।

সর্বশেষ খবর