শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে ভয়ঙ্কর সংক্রমণ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটে ভয়ঙ্কর সংক্রমণ

বিভাগের চার জেলার মধ্যে সিলেট এখন করোনার হটস্পট। ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে মরণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ। হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার জন্য গেল ঈদুল ফিতরের আগে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কেনাকাটাকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। শুরুতে বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে কম আক্রান্ত ছিল সিলেট জেলায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহে বাকি তিন জেলাকে টপকে শীর্ষে অবস্থান নিয়েছে সিলেট। বিভাগের বাকি তিন জেলার মোট আক্রান্তের প্রায় সমান আক্রান্ত এখন শুধু সিলেট জেলায়। ঈদের পর থেকে সিলেটে ভয়াবহভাবে বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। এ অবস্থায় কেবল ঘরে থাকা ছাড়া করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিলেটে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে ৫ এপ্রিল। এরপর করোনা রোগীর সন্ধান মেলে মৌলভীবাজারে। শুরুতে বিভাগের চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে ‘নিরাপদই’ ছিল সিলেট। বিভাগের বাকি তিন জেলার চেয়ে সিলেটে সংক্রমণের পরিমাণ ছিল কম। আক্রান্তের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল হবিগঞ্জ। চলতি মে মাসের শুরুর দিক পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ ফেরতদের মাধ্যমে আক্রান্ত বাড়তে থাকে হবিগঞ্জে। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সুনামগঞ্জ। আক্রান্তের দিক দিয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল সিলেট। লকডাউনের শুরু থেকে সিলেটের সব মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু হুট করে ঈদের প্রায় এক সপ্তাহ আগে নগরীর হাসান মার্কেট ও লালদীঘি হকার্স মার্কেট খোলার ঘোষণা দেয় সংশ্লিষ্ট মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি। ১৮ মে থেকে মার্কেট দুটি খুলে দিলে ধীরে ধীরে খুলতে থাকে নগরীর প্রায় সবকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ থাকে শুধু কয়েকটি মার্কেট। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীতে চলে উৎসবের আমেজে কেনাকাটা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মূলত এই ঈদ কেনাকাটায়ই সর্বনাশ হয়েছে সিলেটে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিলেট অফিস সূত্র জানায়, ১৮ মে ঈদের কেনাকাটার জন্য মার্কেট খুলে দেওয়ার দিন সিলেট জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৬ জন। অর্থাৎ প্রায় দেড় মাসে সিলেটে আক্রান্ত হন ১৬৬ ব্যক্তি। এরপর গত ১০ দিনে সিলেটে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬৪ জন। এর মধ্যে গত দুই দিনে (বুধ ও বৃহস্পতিবার) আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩ জনে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে মোট আক্রান্ত ৮২৬ জনের মধ্যে ৪৩০ জনই সিলেটের।

হঠাৎ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, ‘ঈদুল ফিতরের আগে সিলেটে উৎসব করে মানুষ কেনাকাটা করেছে। কোনোভাবেই মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি। এর মাধ্যমেই সিলেটে করোনার বিস্তার ঘটেছে। এ ছাড়া ঈদের সময় বাইরের জেলাগুলো থেকেও অনেকে এসেছেন। তাদের মাধ্যমেও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের ৩-৫ দিনের মধ্যে সাধারণত উপসর্গ দেখা দেয়। সেই হিসেবে ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে যারা সংক্রমিত হয়েছেন তাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেওয়া শুরু হয়েছে। যে কারণে গত দুই দিনে ৩৭০টি নমুনা পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন করোনা থেকে বাঁচতে হলে ঘরে থাকা ছাড়া আর বিকল্প কিছু নেই।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর