চট্টগ্রামের ১৮টি বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা আছে প্রায় ১২১টি। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালের এমন স্পর্শকাতর সময়ে এ সব হাসপাতালের আইসিইউ শয্যায় রোগী আছে মাত্র ৮ জন। তাছাড়া ১০জন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অথচ এমন সময় হাসপাতালসমূহে ১৩৫টি শয্যা খালি আছে। গত সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের গঠিত সার্ভিল্যান্স কমিটিকে প্রদত্ত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। জানা যায়, গত ৩১ মে বেসরকারি হাসপাতালে কভিড-১৯ ও নন-কভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত ও তদারকি করতে সাত সদস্যের সার্ভিল্যান্স কমিটি গঠন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। গত ৪ জুন ১৮ বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন কতজন করোনা আক্রান্ত কিংবা উপসর্গের রোগী ভর্তি করা হচ্ছে, আইসিইউতে কতজন ভর্তি হচ্ছে, কতজন রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত দেওয়া হচ্ছে, খালি বেডের সংখ্যাসহ নানা তথ্য দিতে বলা হয়েছে। হাসপাতালগুলো টিমকে প্রতিবেদন দেওয়া শুরু করেছে। তবে প্রতিবেদনে যথাযথ তথ্য দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৮ হাসপাতালের মধ্যে ৬টি হাসপাতাল রোগী ফেরত দেওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ পাঁচজন রোগী ফেরত দিয়েছে ডেল্টা হাসপাতাল, তিনজন করে ফেরত দিয়েছে সার্জিস্কোপ, পার্কভিউ ও মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, রয়েল হাসপাতাল ও সিএসটিসি হাসপাতাল ফেরত দিয়েছে দুজন করে। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ম্যাক্স হাসপাতালে প্রায় ২০টি আইসিইউ শয্যা থাকলেও রোগী মাত্র একজন। কিন্তু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আইসিইউসহ হাসপাতালের একটি শয্যাও খালি নেই। বেসরকারি এসব হাসপাতালে সর্বনিম্ন পাঁচটি থেকে সর্বোচ্চ ৩০টি পর্যন্ত আইসিইউ শয্যা আছে। সার্ভিল্যান্স টিমের আহ্বায়ক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘১৮টি হাসপাতালে দেওয়ার চিঠি মতে তথ্য পাঠানো হচ্ছে। তবে প্রদত্ত প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতি দেখা যাচ্ছে।
প্রতিদিন রোগী ভর্তি না নেওয়ার খবর আসছে। বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে, তদারকিও করছি। তবে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে রোগীর সেবা নিশ্চিত করা। কাজটা করতে হবে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই।’
করোনা মোকাবিলায় গঠিত স্বাচিপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সমন্বয়কারী ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আইসিইউ এবং শয্যার অভাবে আর কত মৃত্যু হলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি নেবে, তা আমার বুঝে আসে না। প্রতিদিনই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অথচ একটি অসাধু চক্র আছে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার অপচেষ্টায়। করোনাকালেও বাণিজ্যিক মনোভাব! ভাবতেও অবাক লাগে। আমরা চাই, সব হাসপাতালে রোগীরা স্বাভাবিক চিকিৎসা পাক।’জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, ‘সরকারের লাইসেন্স নিয়ে জনগণকে চিকিৎসা না দেওয়াটা নাগরিক অধিকার ক্ষুণœ করার নামান্তর। এটি সম্পূর্ণ অন্যায়। তাই আইন জারি করে হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কভিড-নন কভিড ভাগ করে দ্রুত চিকিৎসা সেবা চালু করা। অন্যথায় সরকারের উচিত হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা।’