বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনা সংক্রমণ

আতঙ্কে যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীরা

‘নেগেটিভ রিপোর্ট’ নিয়ে বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীদের মধ্যে বৈষম্য

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

আতঙ্কে যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীরা

চলমান মহামারীকালে সাম্যের নতুন পৃথিবী গড়ার স্লোগান উঠেছে সারা বিশ্বে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীদের ক্ষেত্রে তৈরি করা হয়েছে পাসপোর্ট বৈষম্য। বিমান বাংলাদেশসহ কয়েকটি এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যাত্রী পরিবহনে ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীদের কভিড পরীক্ষার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য কভিড নেগেটিভ রিপোর্ট করা হয়েছে বাধ্যতামূলক। তাই একই ফ্লাইটে পরীক্ষা ছাড়া যাত্রীদের সঙ্গে ভ্রমণ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন ‘নন কভিড রিপোর্টধারী’ যাত্রীরা। জানা গেছে, আগে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যেতে সব যাত্রীর কভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং টার্কিশ ও কাতার এয়ারওয়েজ নতুন ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে, এখন থেকে ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীদের যুক্তরাজ্যে যেতে কভিড-১৯ পরীক্ষা লাগবে না। কিন্তু বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ‘কভিড নেগেটিভ রিপোর্ট’ বাধ্যতামূলক। যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীরা বলছেন, ‘একই ফ্লাইটে ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা যুক্তরাজ্যে যাবেন। যাত্রীদের কেউ কভিড পরীক্ষা করাবেন, কেউ করাবেন না। এতে ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীদের কেউ করোনা আক্রান্ত থেকে থাকলে ফ্লাইটের অন্য যাত্রীরাও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। কিন্তু সবার জন্য কভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে এই ঝুঁকি থাকত না।’

 এয়ারলাইনসগুলোর এমন সিদ্ধান্ত অনেকেই পাসপোর্ট বৈষম্য হিসেবেই  দেখছেন। সিলেটের বিশ্বনাথের সাইফুল আলম পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলেন। করোনা দুর্যোগে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারেননি। এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরে যেতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট কেটেছেন। সাইফুল আলম ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন, ‘মহামারীও আমাদের মানসিকতার বদল ঘটাতে পারছে না! না হলে একেক দেশের পাসপোর্টধারীদের জন্য কেন ভিন্ন নিয়ম হবে?’ সিলেটের বিয়ানীবাজারের জাহাঙ্গীর খান যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তবে ব্রিটিশ পাসপোর্ট এখনো পাননি। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে ফিরতে টিকিট বুকিং দিয়েছি। ব্রিটিশ আর বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা একই ফ্লাইটে যাব। এখন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী কেউ করোনা আক্রান্ত থাকলে আমরা যারা পরীক্ষা করিয়ে যাচ্ছি, তারা কিন্তু সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছি। বিষয়টি আসলে অস্বস্তিকর।’

এদিকে, এমিরেটস এয়ারলাইনস আগের মতোই সব যাত্রীর জন্য কভিড-১৯ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক রেখেছে। ফলে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী অনেকেই এখন বিমান বা অন্য এয়ারলাইনসের টিকিট বাতিল করে এমিরেটসে যেতে ট্রাভেলসগুলোতে যোগাযোগ করছেন।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সিলেটের জেলা ব্যবস্থাপক শাহনেওয়াজ মজুমদার বলেন, ‘ব্রিটিশ পাসপোর্টধারীদের কভিড-১৯ পরীক্ষা লাগবে না, এটা আসলে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত। তাদের পক্ষ থেকে এটা জানানো হয়েছে। এখানে বিমানের কিছু করার নেই।’

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের নির্বাহী সহসভাপতি আজহারুল কবির চৌধুরী সাজু বলেন, ‘একই ফ্লাইটে করোনা পরীক্ষা করা ও না করা ব্যক্তিরা যাবেন, এটা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে যাবেন, সঙ্গে বাচ্চা ও বয়স্ক ব্যক্তিরা আছেন। ফলে তারা আতঙ্কিত। যাত্রীরা সবার জন্য একই নিয়ম করার দাবি জানাচ্ছেন।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর