সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

আসছে ভারতীয় গরু হতাশায় খামারিরা

ক্রেতা নেই হাটে আমদানি বন্ধের দাবি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তপথে ভারতীয় গরু আমদানি করা হচ্ছে। সেসব গরু কোরবানির পশুর হাটেও তোলা হচ্ছে। এতে কমে গেছে দেশি গরুর দাম। ফলে হতাশায় পড়েছেন রাজশাহীর খামারিরা। তারা ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহীর সিটিহাটে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির আগে হাটে এখন প্রচুর গরু উঠেছে। তবে ক্রেতা কম। হাটে দেশি গরুর পাশাপাশি আছে প্রচুর ভারতীয় গরুও। সেসব গরুর দাম তুলনামূলক কম। এর প্রভাবে দেশি গরুরও দাম পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে আসা গরুগুলো ট্রাকে করে হাটে নেওয়া হচ্ছে। পথে গোদাগাড়ীর রাজাবাড়িহাটে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কাস্টমসের যৌথ চেকপোস্টে করিডরের কাগজ দেখানোর জন্য ট্রাকগুলোকে থামতে হচ্ছে। সরেজমিন এ দৃশ্য দেখা গেছে। রাজশাহী প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গরু-মহিষ আছে প্রায় এক লাখ। আর ছাগল আছে দুই লাখ ২৮ হাজার। অন্যান্য পশু আছে ৪২ হাজার। সব মিলে কোরবানির জন্য পশু আছে মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার। কোরবানি শেষে উদ্বৃত্ত থাকবে এক লাখ গবাদিপশু। এরপরেও ভারত থেকে গরু আমদানি হওয়ায় হতাশ স্থানীয় খামারিরা। তারা বলছেন, এবার বন্যার কারণে চাষিরা গবাদিপশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে হাট জমছে না। করোনা আর বন্যার কারণে এবার এমনিতেই পশুর দাম কম। এ অবস্থায় ভারতীয় গরু আমদানিতে দাম আরও কমছে। বাধ্য হয়ে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রাজশাহীতে তাদের চারটি খাটাল আছে। এর মধ্যে একটি খাটাল দিয়ে ভারতীয় গরু আসছে বলে তিনি শুনেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের খাটালগুলোর ব্যাপারে তার কাছে তথ্য নেই।

 তিনি বলেন, ‘সরকার যদি খাটাল চালু রেখে গরু আমদানির সুযোগ দেয় তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’

এদিকে অন্য বছরের মতো এবার বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনায় আগ্রহী বেপারিদের দেখা নেই। এ ছাড়া ক্রেতার অভাবে হাটে নিয়েও গরু বিক্রি করা যাচ্ছে না। প্রতি বছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার গরুর বেপারিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন।

রাজশাহীর তানোরের খামারি আবদুস সালাম বলেন, অন্য বছর গরুর বেপারিরা এত দিনে ঢাকার কোরবানির হাটকে সামনে রেখে গরু পালনকারীদের কাছ থেকে গরু কেনা শুরু করে দেন। কিন্তু এবার বেশিরভাগ বেপারি ভয়ে গরু কিনছেন না। হাটে নিয়ে গেলেও ক্রেতারা মনমতো দাম বলছেন না। তাই বিক্রি হয়নি। তাই ঠিক করেছেন, কোরবানির পরে এগুলো বিক্রি করবেন।

রাজশাহীর সিটি বাইপাস এলাকার খামারি মালেক মিয়া বলেন, ‘বাড়িতে গরুর বেপারি তো আসেই না। হাটে সাতটি গরু নিয়ে কয়েক দিন থেকে ঘুরছি। কিন্তু গরুর বাজার একেবারে কম। এ জন্য গরু বিক্রি নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি। গরুকে যে খাদ্য খাইয়ে লালন-পালন করেছি সেই দামই উঠবে না বলে মনে হচ্ছে। করোনা আর ভারতীয় গরু আসার কারণে আমাদের দুরাবস্থা।’

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে হাটে তো ক্রেতাই ছিল না। এখন একটু একটু করে ক্রেতারা আসছেন। তিনি দাবি করেন, হাটে ভারতীয় গরু কিছু এলেও দেশির সংখ্যা বেশি। ক্রেতার চেয়ে গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই দাম কম।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অন্তিম কুমার সরকার জানান, জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে গবাদিপশু আছে। জেলায় কোরবানি ঈদে দুই লাখ গবাদিপশুর প্রয়োজন পড়ে। আছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোরবানির জন্য উপযুক্ত পশু। অতিরিক্ত পশু আর করোনার কারণে দামে প্রভাব পড়েছে।

সর্বশেষ খবর