বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে কথা বলা অনুচিত ও অন্যায়

--- এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেছেন, ‘চলতি অর্থবছর অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগে সব প্রতিষ্ঠানকেই দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানই এ আইনের আলোকে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। রাষ্ট্র আইন করে এই দায়মুক্তি দিয়েছে। এটা দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) মানতে হবে। তাদের কথা বলার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। এটা নিয়ে কথা বলা অনুচিত ও অন্যায় হবে এবং কেউ চ্যালেঞ্জ করলে এর কোনো জবাব নেই। সেটাও ব্যাখ্যা করে দিয়েছি। তবে অবৈধ সম্পদ নিয়ে দুদক প্রশ্ন করতে পারবে। কিন্তু অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। কারণ এই আইন সংসদ করেছে।’ গতকাল   রাজধানীর সেগুনবাগিচার রাজস্ব ভবনে অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ১০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি মেশিন বসানোর কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব বাংলাদেশ মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রমুখ।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অপ্রদর্শিত বিনিয়োগে তেমন উল্লেখ্যযোগ্য সাড়া পাচ্ছি না। এ ক্ষেত্রে যেটা হয়, অনেকে ভয় পান। এনবিআর অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না। এর পরও করদাতাদের মনের ভিতর ভয় হয় যে অন্য প্রতিষ্ঠান যদি প্রশ্ন করে! কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো প্রশ্ন করলে সংশ্লিষ্ট করদাতা সোজা আদালতে গিয়ে রিট করবেন। রাষ্ট্র আইন করে এই দায়মুক্তি দিয়েছে। সেখানে এই আইনকে বরখেলাপ করে কেউ চ্যালেঞ্জ করেছে বা প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, তাই তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন করদাতারা। আমার মনে হয় না করদাতাদের আইনের আশ্রয় পর্যন্ত যেতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারেন, সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনবিআর কথা বলেছে, তাদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই আইনের। এই দায়মুক্তির মাধ্যমে এনবিআর যে সুবিধা দিতে চেয়েছে, তাতে যে-কেউ আইনের স্পিট বা গতির ওপর শ্রদ্ধা করবেন।’

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘মহামারী করোনার কারণে রাজস্ব ঘাটতি থাকবেই, এটাই স্বাভাবিক। কারণ অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে রাজস্ব আহরণ সম্পৃক্ত। কিন্তু করোনাকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চলবে, তা তো আমরা আশা করতে পারি না। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অবশ্যই কম। প্রশ্ন আসবে যে আমার রাজস্ব আসবে কীভাবে তাহলে, বা রাজস্ব ঘাটতি কীভাবে আমরা পূরণ করতে চাইছি। আমরা সাধারণ রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি এই সময়ে জোর দিচ্ছি বকেয়া আদায়ে। অনিষ্পন্ন মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিচ্ছি। যেগুলো হাতে আছে, সেগুলো আদায়ে বেশি জোর দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে যে বিষয়গুলো রয়েছে, এর মূলে রয়েছে করজাল বাড়ানো। করহার না বাড়িয়ে করজাল বাড়ানো। এটা ভ্যাট ও কর সব ক্ষেত্রেই করব। এ ক্ষেত্রে সৃজনশীল কর্মকান্ড করছি। আমরা স্বীকার করি যে করজালের মধ্যে যাদের আসার কথা, সবাই কিন্তু আসেনি। সুতরাং করজাল বাড়িয়ে রাজস্ব ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করব।’

সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে গোয়েন্দা কর্মকান্ড বাড়িয়ে কোনো বার্তা দিচ্ছি না। এটাই আমাদের কাজ হওয়ার কথা। আমরা ফাঁকি রোধ করব। গোয়েন্দা কর্মকান্ড আসলে ফাঁকিই রোধ করে। নিয়মিত কর্মকান্ড হয়তো গতিহীন ছিল, সেটি জোরদার করা হয়েছে। প্রকৃত অর্থেই যে খাত থেকে যতটুকু রাজস্ব আসার কথা, ততটুকু আসছে কি না, সেটি নিশ্চিত করাই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কাজ।’

করোনাকালে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। রেমিট্যান্স বেড়েছে। শেয়ারবাজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এসব কর্মকান্ড থেকে আমি মনে করি, করোনাভীতি যেটা, সেটা অতিক্রম করে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।’

ইএফডি প্রসঙ্গে আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, শতভাগ কর ফাঁকি বন্ধে ইএফডি করা হয়েছে। গ্রাহকেরও সচেতনতা দরকার আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাওনা বকেয়া আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই বকেয়া আদায়ে এনবিআরের কোনো ঘাটতি নেই। বরং সেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তরফ থেকেই ঘাটতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে এনবিআর। যাদের কাছে বকেয়ার পরিমাণ বেশি আছে, তাদের কোনো সুযোগ দেবে না এনবিআর। প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগী হলেই এনবিআর বকেয়া পাবে। বকেয়া পরিশোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কার্পণ্য থাকবে না বলে আশা করছি।’

 

সর্বশেষ খবর