বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

নারী পাচারের ভয়ঙ্কর দম্পতি ধরা

আদালতে স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেখে মনে হবে সাধারণ দম্পতি। অথচ নারী ও শিশু পাচার এবং দেহ ব্যবসার রোমহর্ষক ঘটনার হোতা তারা। টার্গেট করে তারা নারী ও শিশুদের আস্থা অর্জনের পর বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যেত ভারতে। এরপর শুরু হতো ধর্ষণের মতো অমানুষিক নির্যাতন। রাজধানীর এক কিশোরীকে সীমান্ত থেকে উদ্ধারের পর এ চক্রটিকে শনাক্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, মানব পাচারের এই চক্রের হোতা মহেনুমুজ্জামান ওরফে প্রতীক খন্দকারকে সোমবার চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাচারকারী চক্রের জান্নাতুল ওরফে জেরিন, রিফাত ও জাকিয়া আগেই গ্রেফতার হন। এদের দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জেরিন গ্রেফতার হলেও এখন তিনি জামিনে মুক্ত। প্রতীক ও জেরিন দুজনই প্রতারক। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে একসঙ্গে বসবাস করতেন এবং নারীদের বিদেশে পাঠানোর জন্য বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে তাদের ভারতে দালাল চক্রের কাছে বিক্রি করে দিতেন এবং জোরপূর্বক অশালীন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন। চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দেশ থেকে নারীদের বিদেশে নিয়ে গিয়ে দেহ ব্যবসার উদ্দেশ্যে বিক্রি করে দিতেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রতীক ও জেরিন দুজনই বিভিন্ন বয়সী নারীদের মালয়েশিয়া, দুবাই ও ভারতে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন। তবে বিদেশে পাঠানোর জন্য ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তারা কোনো টাকা নিতেন না। প্রথম থেকে শুরু করে ভারতে তাদের বিক্রির আগ পর্যন্ত খুব ভালো ব্যবহার করতেন। এরপর ভারতে পাচারের পর তাদের অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করত চক্রটি। ওই চক্রের কাছে এসব নারীকে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন প্রতীক ও জেরিন।

এর আগেও তারা বিভিন্ন নারীকে সৌদি আরব পাঠানোর কথা বলে ভারতে পাচার করেছেন এবং অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

সিআইডি জানতে পারে, প্রতীক খন্দকার ও জেরিন পরস্পর স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রাজধানীর পশ্চিম মাদারটেক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট ভাড়া নেন। এক পর্যায়ে ওই বাসারই এক তরুণীকে ফাঁদে ফেলেন তারা। গত বছরের নভেম্বরে মা-বাবার সঙ্গে মনোমালিন্য হলে তারা ওই তরুণীকে ফুঁসলিয়ে বাসার বাইরে নিয়ে আসেন। এরপর মেয়েটিকে নেশা জাতীয় কিছু খাইয়ে অচেতন অবস্থায় বেনাপোলে নিয়ে যায়। সেখানে গণধর্ষণের শিকার হয় ওই কিশোরী। পাচারের শিকার মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর সবুজবাগ থানায় মামলা হলে পুলিশ গত বছরের ২৩ নভেম্বর বেনাপোলের একটি বাসা থেকে উদ্ধার করে মেয়েটিকে। এ সময় আটক করা হয় তাদের সাবলেটে ভাড়া থাকা জেরিনকে। তবে পালিয়ে যায় তার স্বামী প্রতীক। এরপর পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে অনুসন্ধানে এক বছরের মাথায় গ্রেফতার হলেন চক্রের হোতা প্রতীক। 

গ্রেফতার প্রতীক খন্দকারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে পৃথক দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি রেজাউল হায়দার।

সর্বশেষ খবর