রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

পাথর সংকটে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ স্থবির

বিপাকে পড়েছেন ঠিকাদার ও কোয়ারি কর্মীরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেটের পাথরের খ্যাতি রয়েছে সারা দেশে। সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে দেশের উন্নয়ন কাজের প্রায় ৭০ ভাগ পাথরের জোগান হতো। কিন্তু পাথর রাজ্যে এখন বিরাজ করছে চরম সংকট। মানসম্পন্ন পাথরের অভাবে সিলেটে আটকে রয়েছে উন্নয়ন কাজ। সরকারি সাতটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় হাজার কোটি টাকার কাজে বিরাজ করছে স্থবিরতা। অনেক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও পাথর না পেয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন না ঠিকাদাররা। পাথর সরবরাহ নিশ্চিতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। জানা গেছে, সারা দেশের উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হতো সিলেটের বিভিন্ন কোয়ারি থেকে উত্তোলিত পাথর। সিলেটের পাথরের উপর নির্ভরশীল ছিল সারা দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড। কিন্তু পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডের জন্য একবছর ধরে বন্ধ রয়েছে সিলেটের সবকটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতিতে ভারত থেকেও পাথর আমদানিও বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সিলেটজুড়ে দেখা দিয়েছে পাথর সংকট। পাথরের অভাবে বন্ধ রয়েছে কয়েক হাজার ক্রাশার মেশিন। বেকার হয়ে পড়েছেন পাথর উত্তোলন ও ভাঙায় জড়িত প্রায় ১ লাখ শ্রমিক। পাথরের অভাবে সিলেটের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার সরকারি উন্নয়ন কাজও বন্ধ রাখতে হচ্ছে ঠিকাদারদের। সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল, গণপূর্ত, সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য প্রকৌশল ও জেলা পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু মানসম্পন্ন পাথর না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন ঠিকাদাররা। পাথরের অভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন না তারা। ফলে প্রকল্পের সাইটে ফেলে রাখা রড, সিমেন্ট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী নষ্ট হচ্ছে। ঠিকাদাররা জানান, কোয়ারি থেকে উত্তোলন ও আমদানি বন্ধ থাকায় সিলেটে পাথর সংকট দেখা দিয়েছে। মানসম্পন্ন পাথরের অভাবে সময়মতো তারা প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারছেন না।

আর সময়মতো বিল না পাওয়ায় তারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল ও শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের ঠিকাদার দেবাংশু দাস মিঠু জানান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের আবদুল মজিদ কলেজের একাডেমিক ভবন, বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি সার্ভিস সেন্টার, কানাইঘাট উপজেলা কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও দুটি ভূমি অফিসসহ প্রায় ২০ কোটি টাকার সরকারি কাজ তিনি করছেন। কিন্তু পাথরের অভাবে প্রকল্পগুলোর কাজ তিনি চালিয়ে যেতে পারছেন না। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি।

শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল জানান, একদিকে সিলেটের কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে করোনার জন্য ভারত থেকে পাথর আমদানি হচ্ছে না। এ অবস্থায় পাথর সংকট সৃষ্টি হওয়ায় ঠিকাদাররা প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। দ্বিগুণ দামেও তারা মানসম্পন্ন পাথর পাচ্ছেন না। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও ঠিকাদারদের চাপ দিচ্ছে। এতে আর্থিক ও মানসিকভাবে ঠিকাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই সংকট দূর করতে সরকারকে উদ্যোগী হয়ে পাথর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়–য়া জানান, পাথর সংকটের কারণে সওজের প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজ বন্ধ রয়েছে। গত মার্চ মাসে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সিলেট অংশের ২৬ কোটি টাকার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পাথর না পেয়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর