রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত রাহাত খান

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাজা ও ফুলেল শ্রদ্ধা শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রবীণ সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান। গতকাল বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মৃতদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষীরা। ক্লাব প্রাঙ্গণে রাহাত খানের জানাজায় অংশ নেন সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাহিদুজ্জামান ফারুক, গাজীউল হাসান, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুসহ সাংবাদিক,

 সাহিত্যিক, কবি, প্রকাশকরা। পর রাহাত খানকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করে ইকবাল  সোবহান চৌধুরী বলেন, তিনি ছিলেন সাংবাদিক ও সম্পাদক। সুস্থ সাংবাদিকতা, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা এবং সর্বোপরি বস্তুনিষ্ঠতা ও নীতিনৈতিকতা মেনে সাংবাদিকতা করা ছিল তার দৃঢ়চিত্তের প্রতিজ্ঞা। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি আমাদের সাহিত্য জগতে অনন্য একটি স্থান করে নিয়েছেন। তার কীর্তির মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘কথাসাহিত্যিক রাহাত খানের হঠাৎ চলে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। একজন প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষ, আজীবন প্রগতির পক্ষে, আজীবন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কথা বলেছেন, কলম ধরেছেন। তার এই মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, রাহাত খান এক অপূর্ব এবং বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তার কার্যনির্বাহী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন রাহাত খান। সেই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে। এসেছিলেন কবি জসীমউদ্দীন, জয়নুল আবেদিন। আমাদের গর্ব এটাই, রাহাত ভাই সেই বয়সে সাহিত্যে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলা সাহিত্যে যে একটি গতিময় বাংলা ভাষা আছে, তৎকালীন পূর্ববঙ্গ থেকে পরবর্তীতে বাংলাদেশে যাদের হাত ধরে তা প্রবাহিত হয়েছে, রাহাত খান তাদের অন্যতম।

রাহাত খানের সহধর্মিনী অপর্ণা খান বলেন, আপনাদের সবার কাছে রাহাত খানের জন্য আমি দোয়া প্রার্থী। আর এই দুঃসময়ে যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, রাহাত খান শুধু কর্মজীবনে নন, ব্যক্তিজীবনেও নিরহংকার ও অমায়িক মানুষ ছিলেন। তিনি সুন্দর ও নান্দনিক জীবন-যাপন করতেন। রাহাত খানের কাজ, তার কথা, সান্নিধ্যের অভাব আমরা দীর্ঘদিন অনুভব করব। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ দেশের সাংবাদিকতা এবং সাহিত্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। তিনি তার সৃষ্টির মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে। সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, আমরা যেন একটা লাশের মিছিলের মধ্যে আছি।

এ বছর জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত আমরা জাতীয়  প্রেস ক্লাবের ১৬ জন সদস্যকে হারিয়েছি। এদের মধ্যে সর্বশেষ রাহাত ভাই, যিনি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় সাংবাদিক এবং অভিভাবক। শুধু সাহিত্যের  ক্ষেত্রে নয়, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও রাহাত খান কিংবদন্তিতুল্য।

জানাজা শেষে মৃতদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলা একাডেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, প্রতিদিনের সংবাদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। এরপর মৃতদেহ নেওয়া হয় সর্বশেষ কর্মস্থল প্রতিদিনের সংবাদ কার্যালয়ে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাদ জোহর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর