সিলেট নগরীর ভিতরে যানবাহনের চাপ কমাতে দাবি উঠেছিল একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণের। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই বছর কাজ শুরু হলেও বন্ধ হয়ে যায় ২০১৪ সালে। সড়কটি দুই লেনই থাকবে নাকি চার লেনে উন্নীত করা হবে, নাকি দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনের হবে, এ নিয়ে গবেষণা ও ফাইল চালাচালিতেই পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ১০ বছর। এখন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি দল সড়কটি পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনে বলছে, আপাতত এটি দুই লেনেই নির্মাণ করলে চলবে। সচেতন মহল বলছে, যদি দুই লেনেই নির্মাণ করা হবে, তবে কেন ১০ বছর ধরে ফাইল চালাচালি করা হলো। জানা গেছে, ২০১০ সালের ৪ আগস্ট বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়। ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটি দুই লেন কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় বরাদ্দ ফেরত যায়। সাড়ে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আংশিক কাজের পর ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। পরবর্তীতে নগরীতে যানবাহনের চাপ কমানো, পাথরবাহী ট্রাকের চলাচল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ও তাদের স্বজনদের আসা-যাওয়া, বঙ্গবন্ধু আইসিটি পার্কে যাতায়াত, পর্যটকবাহী যানবাহনের জন্য সহজ যাতায়াত সুবিধা এবং বিমানবন্দর ও বাদাঘাট এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে ওই বাইপাস সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি উঠে সিলেটের বিভিন্ন মহল থেকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট থেকে চার লেনের একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালে আগের প্রস্তাব সংশোধন করা হয়। চার লেনের সঙ্গে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে সংশোধিত প্রস্তাবনা পাঠানো হয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। পরে সেই প্রস্তাবনা সংশোধন করা হয় আরও একবার। বছরখানেক আগে চার লেনের সড়ক প্রকল্পের প্রস্তাবনাই যায় মন্ত্রণালয়ে। সময় গড়িয়েছে ১০ বছর। প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশোধনও চলছে একের পর এক। কিন্তু বিমানবন্দর-বাদাঘাট বাইপাস সড়ক নির্মাণের অগ্রগতি আর হয়নি কিছুই। সম্প্রতি সড়কটি দুই লেনেই নির্মাণের পক্ষে মত দেন সড়ক সচিব। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সিলেটের রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করে গত ৮ আগস্ট পাঠানো হয় সিলেটে। সড়কের প্রকৃত অবস্থা এবং চার লেনে উন্নীতকরণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পাঠানো হয় দলটিকে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম প্রধান জাকির হোসেনের নেতৃতে উপ-প্রধান শামিমউজ্জামান, সওজের রোড সেইফটি স্ট্যান্ডার্ড বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিকী ও পরিকল্পনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজা ছিলেন প্রতিনিধি দলে।
জানা গেছে, এ প্রতিনিধি দল গত ১৭ আগস্ট সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বর্তমানে যে পরিমাণ ট্রাফিক/যানবাহন চলাচল করে, এ ট্রাফিক বিবেচনায় কমিটির কারিগরি সদস্যদের মতামত অনুযায়ী প্রস্তাবিত সড়কটি ২ লেনে নির্মাণ করলেই বিদ্যমান সমস্যা সমাধান হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সিলেট উন্নয়ন পরিষদের সদস্য সচিব আহমেদ নূর বলেন, সড়কটি নিয়ে সিলেটবাসীর সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। চার লেন আর ছয় লেন নিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর গবেষণা আর ফাইল চালাচালির পর এখন বলা হচ্ছে সড়কটি দুই লেন হলেই চলবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা পরিকল্পনাহীন।