বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালে রংপুরে বাল্যবিয়ের মচ্ছব

নজরুল মৃধা, রংপুর

করোনা মহামারীর কারণে সারা দেশে বিয়ে-শাদি যখন বন্ধ ছিল তখন বাল্যবিয়ের মচ্ছব হয়েছে রংপুরের পীরগঞ্জে। করোনা মহামারীর সময় এই উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জনের বাল্যবিয়ে হয়েছে। উপজেলার বড় আলমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু ষোলঘরিয়া গ্রামের ১৩ জনসহ ২০ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়। ইতিমধ্যে দুটি বিচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।  বড় আলমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, মার্চ মাস থেকে সারা দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। এ সময় দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বড় আলমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের বাড়িতে লেখাপড়া করে। কিছু অভিভাবক করোনা মহামারীকালে মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। তথ্যমতে ওই বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী ষোলঘরিয়া গ্রামের রুহুল আমিনের মেয়ে-নীলামণি (৬ষ্ঠ শ্রেণি), জয়দুল হকের মেয়ে-তানজিলা (৮ম শ্রেণি), বেলাল হোসেনের মেয়ে-জান্নাতুন (৯ম শ্রেণি), ওয়াহাব আলীর মেয়ে-রওজাতুন (৯ম শ্রেণি), আসাদুল হকের মেয়ে-আঁখিতারা (১০ম শ্রেণি), সামসুল হকের মেয়ে-সামসুন্নাহার (৮ম শ্রেণি), রহমতুল্যাহর মেয়ে-রুপামণি (১০ম শ্রেণি), সাইফুল ইসলামের মেয়ে সালমা খাতুন (১০ম শ্রেণি), মিজানুর রহমানের মেয়ে-রিজামণি (৮ম শ্রেণি), মোস্তাফিজার রহমানের মেয়ে-তানজিনা (৮ম শ্রেণি), জহির উদ্দিনের মেয়ে-জয়নাবি (১০ম শ্রেণি), মতলবের মেয়ে-মেরিনা আক্তার (১০ম শ্রেণি), আবদুল গফুরের মেয়ে-রিপা খাতুন (৯ম শ্রেণি) ও পাশর্^বর্তী তাঁতারপুর গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী-ছিদ্দিকা খাতুন, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পারভীন ও ৯ম শ্রেণির ছাত্রী তানজিনা এবং হোসেনপুর গ্রামের ডিপটির মেয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী শামীমা খাতুন, মোহনা মিয়ার মেয়ে ৭ম শ্রেণির ছাত্রী সেতু খাতুন ও মক্তগাড়ী গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী তানজিলা খাতুনের বাল্যবিয়ে হয়।

ইতিমধ্যে ষোলঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের মেয়ে-রিজামণি ও রহমতুল্যাহর মেয়ে রুপামণির বিয়েবিচ্ছেদ হয়েছে।

বড় আলমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব বিয়ে আগের মেয়ে কিংবা ছেলেপক্ষ বিদ্যালয়ে খোঁজ-খবর নিতে আসেননি। তারা গোপনে বড় আলমপুর ইউনিয়ন কাজী (নিকাহ রেজিস্ট্রার) শাহজাহান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিকাহ রেজিস্ট্রারকে খরচ দিয়ে তারা বিয়েগুলো রেজিস্ট্রি করেছেন। এ পর্যন্ত কোনো পক্ষকেই রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে বিয়ের সনদ দেওয়া হয়নি। গ্রামবাসীর দেওয়া তথ্য মতে- যে বিয়েগুলো হয়েছে তার অধিকাংশ মেয়েই এখনো তাদের পিত্রালয়ে রয়েছে। এ বিষয়ে আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন- এসব বিয়ের বিষয়ে কোনো অভিভাবক পক্ষই যোগাযোগ কিংবা অভিযোগ করেননি।

নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) শাহজাহান আলী জানান, আমি বিয়েগুলো সম্পন্ন করেছি সত্যি। তবে মুসলিম শরিয়া অনুযায়ী, বয়সের ভিত্তিতে নয়।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নুরেশ কাওছার জাহান বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত কোনো তথ্য তার জানা নেই বলে মন্তব্য করেন। এমনকি এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগও করেননি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর