শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সড়কের স্থায়িত্ব বাড়াতে পলিমার বিটুমিন ব্যবহারের তাগিদ

সওজের সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘শত কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণের বছর না ঘুরতেই তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায় অনুন্নত বিটুমিন ব্যবহারের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও দীর্ঘস্থায়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহার করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বে পদার্পণে টেকসই যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্প নেই। এজন্য আমাদেরও সড়ক-মহাসড়কে পলিমার গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করতে হবে।’ গতকাল সড়ক ও জনপথ (সওজ) প্রকৌশলী সমিতির প্রথম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও ৩০তম বার্ষিক সাধারণ সভা উপলক্ষে আয়োজিত ‘সড়ক নির্মাণে পলিমার মডিফাইড বিটুমিনের ব্যবহার, অভিজ্ঞতা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে সংশ্লিষ্ট খাতের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর সড়ক ভবনে আয়োজিত সেমিনারে সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়াও সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সারা দেশের প্রকৌশলীরা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে নিজ নিজ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে যোগদান করেন। সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি ও অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সওজের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাকারিয়া, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) সহকারী অধ্যাপক ড. নাজমুস সাকিব, অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র পেভমেন্ট অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ার জাফর সাদেক চৌধুরী ও সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম ইলিয়াস শাহ। সেশন পরিচালনা করেন সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ সড়কই ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট। রাস্তাগুলো দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে।

 বিশ্বের অনেক দেশ সড়ক দীর্ঘস্থায়ী করতে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করছে। আমরাও সেটা করতে পারি কি না- এ বিষয়টা দ্রুত ভাবা দরকার। আশা করছি, আজকের সেমিনার এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এরপর অতিথিরা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং দেশের সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে উন্নতমানের বিটুমিনের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন।বক্তারা বলেন, দীর্ঘস্থায়ী সড়ক নির্মাণে বিটুমিন পরিবর্তনের জন্য ১৯৯৩ সাল থেকে প্রকৌশলীদের বলে আসছি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। বর্তমানে যে পেনিট্রেশন গ্রেডের বিটুমিন দিয়ে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তাতে কিছু দিন গাড়ি চললেই বিটুমিন থাকছে না। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও এই বিটুমিন ব্যবহার বাদ দিয়েছে। বিটুমিনে আঠা থাকতে হবে। সওজ এখন পারফরম্যান্স গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহারের চিন্তা করছে শুনে ভালো লাগছে। গরমকালে বাংলাদেশের তাপমাত্রা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাস্তার পেভমেন্টের তাপমাত্রা তখন হয় ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় গলে না যায় তেমন বিটুমিন ব্যবহার করতে হবে। পলিমারাইজড বিটুমিন ৭৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও গলে যায় না। সেই সঙ্গে আঠালো হওয়ায় পাথরের ওপর থেকে উঠে যায় না। বাংলাদেশের রাস্তার বড় শত্রু ধীরগতির ভারী যানবাহন। আমরা এতদিন যে বিটুমিন ব্যবহার করে আসছি তা ধীরগতির ভারী যানবাহনের চাপ সইতে পারে না। বিটুমিন ফেটে যায়। আবার তাপমাত্রা বাড়লে গাড়ির চাপে বিটুমিন সরে যায়। পলিমারাইজ বিটুমিন ব্যবহার করলে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা সম্ভব। এতে সড়ক দীর্ঘস্থায়ী হবে। তবে পলিমার ব্যবহার করলেই সেটা ভালো হবে না। বিভিন্ন উপাদানের সঠিক আনুপাতিক মিশ্রণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরেরই এখন মান পরীক্ষার জন্য বড় ল্যাব হয়েছে। দেশের মধ্যে উৎপাদিত বিটুমিনের মান নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান বলেন, কোন বিটুমিন ব্যবহার হবে তার স্পেসিফিকেশন তৈরি করতে বিলম্ব হলে সমস্যা বাড়বে। প্রকল্প তৈরি করা যাবে না। পলিমার বিটুমিন পরীক্ষার সব যন্ত্রপাতি এখন সওজের আছে। তাই বিলম্ব করা ঠিক হবে না। রাস্তা দ্রুত ভেঙে গেলে প্রকৌশলীদেরই কথা শুনতে হয়। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে গেলেই তির্যক মন্তব্য শুনতে হতো। রাস্তা ভেঙে যাওয়ার সমাধান আমাদেরই দিতে হবে। অন্য কেউ দিলে সেটা লজ্জার। যত দ্রুত পলিমার বিটুমিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে ততই মঙ্গল।

সওজের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, রাস্তাগুলো নিচে ঠিক আছে, ওপরে ভেঙে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ও ওভারলোডের কারণে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহারে এ সমস্যা হচ্ছে। তাই আমরা এখন পলিমার মডিফাইড বিটুমিনে যাচ্ছি। অভিজ্ঞদের মতামত নিয়ে কীভাবে এটা ব্যবহার করা যায় সেই চিন্তা করছি। কাঁচপুর-গোমতী সেতুতে পলিমার বিটুমিন ব্যবহার হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে আসবে। বর্তমানে পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেছি। ভবিষ্যতে টেকসই মহাসড়ক নেটওয়ার্ক তৈরিতে পলিমার বিটুমিন ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বসুন্ধরা বিটুমিন, বেঙ্গল সিমেন্ট ও বিএসআরএম।

সর্বশেষ খবর