সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ

সুনামগঞ্জের উন্নয়ন ভাবনা শীর্ষক সুধী সমাবেশ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে নেওয়া মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকা দিয়ে কেনা সাদা গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. এনামুল কবির ইমনের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ করেন মুকুট। গত শনিবার বিকালে সুনামগঞ্জের উন্নয়ন ভাবনা শীর্ষক এক সুধী সমাবেশে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের উপস্থিতিতে এ মন্তব্য করেন নূরুল হুদা মুকুট। প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ‘সামাদ গ্রুপ’ হিসেবে পরিচিত বলয়ে রাজনীতি করে আসছিলেন মতিউর-মুকুট। তাদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ মুকুটের এমন মন্তব্যে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মুকুটের বক্তব্য রাজনৈতিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি

আলহাজ মতিউর রহমান। তবে নূরুল হুদা মুকুট বলেন, ‘সাড়ে তিন বছরে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি হয়েছে, কিন্তু তারা এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি মিটিং করেছেন। কোনো মিটিং হয়নি। আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে অনুরোধ করছি- আপনি বিষয়টি জননেত্রী শেখ হাসিনার নজরে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে, এর প্রতিবাদে আমাদের প্রতিটি অঙ্গসংগঠন মিছিল সমাবেশ করেছে, কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নীরবতা পালন করে যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি  খোশমেজাজে  ঢাকায় বসে নমিনেশন দিয়ে কার কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া যায়- সেই চিন্তা করছেন।’ মুকুটের অভিযোগ, ‘গত নির্বাচনে তারা (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ঢাকায় এক মাস বসিয়ে রেখে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে উপার্জন করেছেন। সভাপতি ওই টাকা দিয়ে একটা সাদা গাড়ি কিনেছেন, সেই গাড়িতে চড়ে তিনি সুনামগঞ্জে আসেন। তিনি বলেন, এসব অথর্ব, অপদার্থ প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারির আমরা অপসারণ চাই। যারা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী, দায়িত্বশীল ও দুর্নীতিমুক্ত সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে- এমন ব্যক্তিদের আপনারা সভাপতি-সেক্রেটারি নির্বাচিত করুন। দুর্নীতিতে নিমর্জিত এই সভাপতি-সেক্রেটারিকে আপনি (পরিকল্পনামন্ত্রী) বাদ দিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি উপহার দিন।’ প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে সম্প্রতি জেলার সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের মতবিরোধ দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রীর উপহার সব মেগা প্রকল্প পরিকল্পনামন্ত্রীর এলাকা শান্তিগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন সদর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। পরবর্তীতে এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ঢাকায় জরুরি বৈঠক করে সুনির্দিষ্ট স্থান প্রস্তাব করে রেজুলেশন পাস করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয় বিলে সংশোধনী আনা নিয়ে বক্তব্য দেন জেলার সব সংসদ সদস্য। সংশোধনী প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্থান সংক্রান্ত ধারায় ‘দক্ষিণ সুনামগঞ্জ’ এর পরিবর্তে ‘জেলার দেখার হাওরের পাড়ে’ বাক্যটি প্রতিস্থাপিত হয়।  এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তন নিয়ে মন্ত্রী বনাম এমপি-আওয়ামী লীগের মাঝে সৃষ্ট মতবিরোধের জেরে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রীর পক্ষে অবস্থান নেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট। বিশ্ববিদ্যালয় বিল সংসদে পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে শনিবার সুধী সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পরিষদ। এতে প্রধান অতিথি করা হয় পরিকল্পনামন্ত্রীকে। ওই সমাবেশে মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও দলীয় কর্মকান্ডে নিষ্ক্রিয়তার  নানা অভিযোগ আনেন মুকুট। মুকুটের বক্তব্য শোনার পর পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভাই মুকুট যা বলেছেন, তিনি কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, তিনি তার নিজের বিরুদ্ধেই বক্তব্য দিয়ে গেছেন।

 তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছেন এবং সব ভাস্কর্য ভাঙবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি জানালেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তেমন কোনো প্রতিবাদ করেনি। তিনি দুঃখ পেয়েছেন। আমরাও দুঃখ পেয়েছি। আমরা চাই, আমাদের সংগঠন জোরালো ভূমিকা রাখুক, কিন্তু রাখে নাই। আপনাদের সামনে আরেকটা বিচার দিলাম।’

মন্ত্রী আরও বলেন, আমার জীবনে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থেকে সেই মন্ত্রীর উন্নয়ন কাজে সেই দলের এমপিরা বাধা দিয়েছেন, এমন উদাহরণ নেই। রাজনৈতিক বিষয়ে মতভেদ হয়, কোন্দল হয়, কিন্তু উন্নয়নে বাধা দেওয়ার নজির  নেই। শিক্ষামন্ত্রী আমাকে বলেন, মান্নান ভাই এটা  কীভাবে হলো, সবাই আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। আমি বলেছি এটা একটা পাপ করেছি। আমার বিচারে মনে হয়েছে শান্তিগঞ্জের পাশে খোলা জায়গাটাতে বিশ্ববিদ্যালয় হলে হবে, তাই আমি প্রস্তাব করেছি। এ জন্য আমাকে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তন হওয়ায় যাদের স্বার্থহানি হয়েছে তারাই আজ আমাদের বিরুদ্ধে এসব বাজে মন্তব্য করছেন। এই বক্তব্য রাজনৈতি অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে এর লিখিত প্রতিবাদ জানাবে। এক সময় সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ সামাদ-সুরঞ্জিত বলয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল। মানুষ এটা পছন্দ করতেন না। এখন দল এক। আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছি আপনি কোন্দলের ঊর্ধ্বে থাকুন। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য তাকেও এখন এখানে টেনে নিয়ে আসা হয়েছে।’

নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে হাদিসের উদাহরণ টেনে মতিউর বলেন, ‘আমি মুকুটের বিরুদ্ধে কিছুই বলব না। তবে সে তো আমার বিরুদ্ধে বলবেই, কারণ আমি বার বার তার উপকার করেছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর