চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সমস্যা-সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজস্ব, প্রকৌশল, পরিকল্পনা, পরিচ্ছন্নতা, সংস্থাপনসহ প্রতিটি বিভাগই নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে হিমশিম খেতে হচ্ছে চসিক পরিচালনায়। বাধাগ্রস্ত হয় পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন। জানা যায়, চসিকের মেয়র ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপরই প্রতিটি বিভাগের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রায় প্রতিটি বিভাগে কর্মরতরা সমস্যা-সংকটের বর্ণনা দিয়েছেন। এ নিয়ে চসিকের নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের সাধারণ সভায়ও বিশদ আলোচনা হয়েছে। চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, অনেক সমস্যা ও সংকট নিয়ে দায়িত্বগ্রহণ করেছি। তবে এটা সত্য যে সমস্যা যেমন আছে সমাধানও আছে। সমস্যাগুলোকে সঙ্গে নিয়েই নগরবাসীর সেবা করে যেতে হবে। সে মানসিকতা নিয়েই কাজ শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রী নানা সমস্যা নিয়ে দেশ পরিচালনা করে আসছেন। আমরা মনে করি, তিনি সফল। আমরাও চট্টগ্রাম নগরের নানা সমস্যাকে সঙ্গে নিয়ে চলব। আস্তে আস্তে সমাধানের মাধ্যমে এগিয়ে যাব।’ অভিযোগ আছে, চসিকের স্বাস্থ্যখাত এখন বেহাল। প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও প্রতিনিয়ত কমছে রোগী। অতীতে যেমন মাতৃসদন হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য তদবির করতে হতো, এখন সেটি প্রায় সময় থাকে রোগী শূন্য। স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য সমস্যার মধ্যে আছে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, ওষুধ, মেডিক্যাল সার্জিক্যাল পণ্যের সংকট।
সঙ্গে আছে চসিক পরিচালিত চারটি মাতৃসদন হাসপাতাল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর জরাজীর্ণ ভবন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ-পানির সংকট। নষ্ট আছে বিভিন্ন হাসপাতালের লিফট ও জেনারেটর। অন্যদিকে, চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের অনেকেই হাজিরায় আছে কাজে নেই। কোন স্তরে কত জনবল আছে, কারা কখন কোথায় কি কাজ করছে, কর্মঘণ্টা কতক্ষণ তার হিসাব নেই। এছাড়া, মশকনিধনে ব্যবহৃত ওষুধে কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ওষুধের কার্যকারিতা মাননির্ণয় ও কেমিকেল টেস্ট আছে কিনা তার তথ্য নেই। মশার ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিনগুলো নিম্নমানের। অনেকগুলো অচল হয়ে গুদামজাত হয়েছে। এছাড়া, বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন ক্রয়কৃত সড়কবাতিগুলোর অধিকাংশই ২-১ মাস পর নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সড়ক আলোকায়ন সুচারুভাবে সম্পাদন হচ্ছে না। অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে বড় বড় এলাকাও। নগরের বেহাল সড়কগুলো মেরামতের প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিটুমিন মজুদ নেই চসিকের। যা আছে তাও নিম্নমানের। প্রকৌশল বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধীরগতি, কাজের মেয়াদ বৃদ্ধিতে সময় ও অর্থের অপচয়, ঠিকাদাররা চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করা, কাজ শেষ না করে বিল নেওয়া, সঠিক মানে কাজ না করাসহ নানা সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে ভর করে আছে। শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। টানা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে চসিকের ১৮টি কলেজ।