অস্তিত্বহীন কতগুলো প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সেজে ৩০ বছর ধরে মানুষকে ধাপ্পা দিয়ে টাকা হাতানোর ওস্তাদ জাহিদুর রহমান ইকবাল অবশেষে ধরা পড়লেন। তার প্রতারণা প্রকল্পের সর্বসাম্প্রতিক বৈশিষ্ট্য মুজিববর্ষে বৃক্ষায়ণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন। এ লক্ষ্য অর্জনে নিজেই নিজের নামের আগে বসিয়েছেন ‘বনবন্ধু’। এটাই তার কাল হয়ে গেল। মুজিবর্ষের লোগো, প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে ৪০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে চিঠি পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের শাহ আলী ভবন থেকে গতকাল সকালে তাকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর রশীদ পরে তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতারণাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এই প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমে যাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পুলিশ তাদের শনাক্তের চেষ্টা করছে। যাতে তারাও এ প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন। পাশাপাশি তার সহযোগীদেরও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইকবাল ৩০ বছর ধরে নানা ধরনের প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজেকে ট্রি প্লান্টেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় দিতেন। মুজিববর্ষে গাছ লাগাবেন বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন। বলতেন তিনি কনসালট্যান্ট গ্রুপ লি., এসএমই কনসালট্যান্ট লি., ইইএফ কনসালট্যান্ট লি.-এর চেয়ারম্যান এবং সিইও। তবে এসব কোম্পানির কোনো বৈধ কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে।
ডিসি হারুন বলেন, তার বিরুদ্ধে আমরা হাজার হাজার অভিযোগ পেয়েছি। আমরা যখন তার কাছে গেলাম তিনি তখন বলেন, আপনাদের যে পুলিশ ব্যাংক আমিই কনসালটেন্সি করে সেটা এনে দিয়েছি। সে জন্য তিনি নাকি কোনো ফিও নেননি। তাকে রিমান্ডে নিলে বোঝা যাবে তিনি কত লোকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছেন। মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণের পোস্টার সাজানো গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতেন ইকবাল।
কোম্পানি নিবন্ধন, সোসাইটি নিবন্ধন, ট্রাস্ট নিবন্ধন, ফাউন্ডেশন নিবন্ধন, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠান নথিপত্র তৈরি, ব্যাংক বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র তৈরি, টিন-ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ডকুমেন্টস প্রসেসিংয়ের নামে বহু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতারক।গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ২৭০টি সিল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৮৪টি ডকুমেন্টস প্রসেসিং ফাইল, মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীসংবলিত ৫০০ চিঠি, দুটি সিপিইউ, দুটি প্রিন্টার, একটি স্ক্যানার, দুটি মনিটর, একটি ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ও একটি টয়োটা করোলা গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।