শুক্রবার, ২৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

আগুনের পর রোহিঙ্গাদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। রোহিঙ্গা পরিবারগুলো আবারও তাদের নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে ফিরতে শুরু করেছে। সরকারের পাশাপাশি বিশ^ খাদ্য সহায়তা সংস্থা, ইউএনএইসসিআর, আইওএম, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিও সংস্থা তাঁবু, শেড নির্মাণ উপকরণসহ জরুরি সহায়তা দিচ্ছে। ত্রিপল, বাঁশসহ ঘর নির্মাণের উপকরণ, আশ্রয় সরঞ্জাম, খাওয়ার পানি, রান্না করা খাবার, মাস্ক, সাবান, কম্বল, সোলার লাইট, মশারি ও জেরিক্যানসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। অগ্নিকান্ডে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করা ৯ হাজার ৩০০ পরিবারের ৪৫ হাজার সদস্যের বসবাসের জন্য সাময়িক এ পদক্ষেপ গ্রহণে ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে ক্যাম্পের দৃশ্য। সরকারের বিভিন্ন দফতর এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টায় বিধ্বস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধ। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের যাতে অন্ন ও বাসস্থান নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রদান করা হয়েছে তাঁবুসহ প্রয়োজনীয় আশ্রয় সরঞ্জাম। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গা পরিবার নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে ফিরতে শুরু করেছে। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বসতবাড়ি পুড়ে যাওয়া স্থানীয় ১২৬টি পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং তদন্ত কমিটির প্রধান শাহ্ রেজওয়ান হায়াত জানান, অগ্নিকান্ডের পর প্রথম থেকে রান্না করা খাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিটি পরিবারকে তাঁবু, শেড নির্মাণের জন্য ত্রিপল, বাঁশসহ ঘর নির্মাণের উপকরণ, আশ্রয় সরঞ্জাম, খাওয়ার পানি, রান্না করা খাবারসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শেড নির্মাণে স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সাহায্য করছে। ইতিমধ্যে অনেকে নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে ফিরেছে। আজকের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সবাই নিজ আশ্রয়স্থলে ফিরতে পারবে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদেরও তালিকা করা হচ্ছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।

সোমবার বিকালে উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়। পুড়ে যাওয়া তিনটি ক্যাম্পের ৯ হাজার ৩০০ পরিবারের প্রায় ৪৫ হাজার সদস্য নিঃস্ব হয়ে গেছে। আগুনের ঘটনায় ১১ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাবমতে অগ্নিকান্ডে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। অগ্নিকান্ডে এক লাখ রোহিঙ্গা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৬০ হাজার রোহিঙ্গা সর্বস্ব হারিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। এ ছাড়া দুই শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দার বসতঘর ও দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ক্যাম্পের ১৩৬টি লার্নিং সেন্টার, দুটি বড় হাসপাতালও পুড়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর