খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার তবলছড়ি ও তাইন্দংয়ে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তান্ডবে স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠী সন্ত্রস্ত-জীবন যাপন করছে। বাঙালিদের বিতাড়িত করতে মারধর, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানান, পার্বত্য শান্তিচুক্তির আলোকে সেনাক্যাম্প অপসারণের সুযোগে ইউপিডিএফ (প্রসিত) সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় মাটিরাঙায় বাঙালির জনজীবন বিপন্নের পথে। ইউপিডিএফ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে কিছু দিন যাবৎ চাঁদাবাজি ও বাঙালি বিতাড়নের চেষ্টা করছে। এরই জেরে ৪ ও ৫ এপ্রিল মাটিরাঙার তবলছড়ি এবং তাইন্দংয়ের শুকনাছড়ি, ইসলামপুর, লাইফুপাড়া ও পংবাড়ীতে তারা নারকীয় হামলা চালায়।
জানা গেছে, ৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাইফুকারবারি পাড়ায় কচু খেতে কর্মরত ২০-২৫ জন বাঙালিকে আকস্মিক ১২-১৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘেরাও করে মারধর করে এবং ১৫-২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়ে ভয় দেখায়। এ সময় চার বাঙালি গুরুতর আহত হন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরদিন সকাল ৮টার দিকে সন্ত্রাসীরা আবার বাঙালি গ্রামে ঢুকে তাদের বেধড়ক মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। একই দিন রাত ৯টার দিকে পুনরায় বাঙালি গ্রামে ৫০-৬০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী হানা দিয়ে বাঙালিদের মারধর করে ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে মুসলিমপাড়া, ইসলামপুর, শুকনাছড়িসহ আশপাশ গ্রাম থেকে বাঙালি একত্রিত হয় তাইন্দং বাজারে। তারা ধাওয়া দিলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় মুসলিমপাড়ার পংবাড়ীর মফিজ মিয়ার সেগুনবাগানের ৩ শতাধিক সেগুন গাছ কেটে দেয়। এরপর নিরীহ আনু মিয়ার চায়ের দোকান পুড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। তবলছড়ি পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।স্থানীয় বাঙালিরা জানিয়েছেন, এলাকা থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের ফলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হামলা, তান্ডব বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঙালিদের মধ্যে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে সন্ত্রাসীরা নির্বিঘ্নে বাঙালির ওপর হামলার সাহস পাচ্ছে। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির শর্তানুযায়ী সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ২৪০টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করে নেয়। এর পরই পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বাঙালির ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুনরায় হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। গতকাল স্থানীয় সংসদ সদস্য, রিজিয়ন কমান্ডার, জোন কমান্ডার ও জেলা প্রশাসক হামলার স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করেন।