গত বছর এপ্রিল-মে মাসে খুলনা নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর (স্থিতি অবস্থা) ছিল ২৮ থেকে ৩১ ফুটের মধ্যে, সেখানে চলতি বছরের মে মাসে কোথাও কোথাও তা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭ ফুটে নেমেছে। বৃষ্টি না হলে পানির স্তর আরও নিচে নামবে এবং তাতে নগরীর ৮০ থেকে ৯০ ভাগ নলকূপে পানি না ওঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খুলনা ওয়াসার জরিপ অনুযায়ী, গত ২২ এপ্রিল বানরগাতী সরওয়ার্দী কলেজ পাম্প এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যায় প্রায় ৩৭ ফুট। এর আগে ১৯ এপ্রিল ফেরিঘাট ট্যাংক এলাকায় পানির স্তর ছিল ৩৮.০৪ ফুট ও ট্রাক টার্মিনাল পাম্প এলাকায় পানির স্তর ছিল ৩৭.৭২ ফুট নিচে। খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, খুলনায় প্রতি বছরই পানির স্তর আগের বছরের তুলনায় ৬-৭ ইঞ্চির বেশি নামছে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর আগের বছরের তুলনায় প্রায় চার ফুট বেশি নিচে নেমে গেছে। সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে পানি তোলার ফলে মাটির নিচের একটা স্তরে পানিশূন্যতা তৈরি হচ্ছে। একটা বড় পাম্প চালালে প্রায় ১ হাজার ফুট নিচে থেকেও পানি তুলে আনে। এভাবে ঘন ঘন সাবমার্সিবল পাম্প স্থাপন করে পানি তুললে আশপাশ এলাকার পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাবে। জানা যায়, বর্তমানে খুলনা মহানগরীর পানির চাহিদার অর্ধেকেরও কম সরবরাহ করতে পারে খুলনা ওয়াসা। ফলে নগরবাসী নিজেদের উদ্যোগে হাতে চালানো নলকূপ ও নলকূপে পাম্প লাগিয়ে পানি তুলছে। এখন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কেসিসির ১, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ৭, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৭, ১৯, ২১, ২৩ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। ফলে এখানকার বাসিন্দারা চরম বিপাকে পড়েছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শাহনেওয়াজ নাজিমুদ্দিন আহমেদ বলেন, শহরের অধিকাংশ বাড়ির মালিকই সাবমার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি তুলছেন। এতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। খাবার পানিসহ নিত্য ব্যবহার্য কাজে পানি পাচ্ছে না নগরবাসী। এদিকে ২০০৯ সালে সিটি করপোরেশনের জরিপে বলা হয়- খুলনায় মাটির তলদেশ থেকে পানি তুললে ভবিষ্যতে এখানকার পরিবেশ বিপন্ন হবে। সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ওই সময় থেকেই মাটির তলদেশ থেকে পানি তুলতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।