সোমবার, ৭ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মাঝারি বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কবলে চট্টগ্রাম

কোথাও গলা, বুক, কোথাও কোমর সমান পানি

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

মাঝারি বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কবলে চট্টগ্রাম

মাঝারি বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাঝারি বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। গতকালের বর্ষণে তলিয়ে যায় নগরীর এক-তৃতীয়াংশ। কোথাও গলা, কোথাও বুক, কোথাও কোমর সমান পানি জমে যায়। বৃষ্টি শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যেই জলমগ্ন হয়ে যায় নিম্নাঞ্চল। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। জমে যাওয়া পানিতে দিনের বেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে গণপরিবহন। পানি ঢুকে যায় বাসা বাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কক্ষে ও হাসপাতালে। অন্তহীন দুর্ভোগে পড়েন চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও কোরবানিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। পানি ঢুকেছে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (ইপিজেড) বিভিন্ন কারখানার নিচ তলায়। তলিয়ে যায় নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, চকবাজার, প্রবর্তক মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, খতিবের হাট, বাকলিয়া, চাক্তাই, আছাদগঞ্জ, মোগলটুলি, আগ্রাবাদ, ট্রাঙ্ক রোড, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, দেওয়ানহাট, আসকারাবাদ, মনসুরাবাদ, পাহাড়তলী, হালিশহর, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বাকলিয়া ডিসি রোড, কেবি আমান আলী রোড, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা। জামালখান, পাথরঘাটা, আসকারদিঘির পাড়ের মতো উঁচু এলাকার বিভিন্ন ভবনের নিচ তলায়ও পানি ঢুকেছে। পানি জমেছে নগরীর ফ্লাইওভারগুলোতে। ফ্লাইওভার থেকে উপচে পড়েছে পানি। নগরের নিচু এলাকার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বাসাবাড়ির মানুষেরা বাসার পণ্য সরাতে পারেননি। ঘরের মধ্যেই হাঁটু পানিতে বসে থাকতে হয়েছে অনেককে। কেউ কেউ পানি সরানোর ব্যবস্থা করলেও বাসার পাশের নালা বন্ধ থাকায় সরছে না পানি। গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়। বিকাল ৩টা থেকে ফের বর্ষণ হয়। এই সময়ে সর্বোচ্চ ৮০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

এদিকে টানা বর্ষণের কারণে নগরীতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সচেতনতা বাড়াতে শুরু হয়েছে মাইকিং।

জানা যায়, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রধান পাঁচটি খালের মুখের ভিতরের অংশে বসানো হচ্ছে স্লুইস গেট। গেট নির্মাণে বাঁধ দেওয়া হয়েছে খাল পাঁচটির মুখে। তাছাড়া সংস্কার করতে গিয়ে চাক্তাই খাল, বিবি মরিয়াম খাল, কলাবাগিচা খালসহ অন্যান্য খালের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে মাটি। অনেক স্থানে সরু হয়ে গেছে খাল। বৃষ্টির পানি যথাসময়ে নামতে পারেনি। ফলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

চসিক মেয়র গত সোমবার ‘খাল-নালা সংস্কার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ পরিচালনায়’ গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠকে ১৫ দিনের মধ্যে খালের মুখের বাঁধগুলো অপসারণের নির্দেশ দেন। গত মঙ্গলবার চসিক-সিডিএ যৌথ বৈঠকেও খালের মুখের বাঁধ অপসারণ নিয়ে আলোচনা হয়। গত বৃহস্পতিবার চসিক মেয়রের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও বাঁধ সরানোর কথা বলা হয়।

কিন্তু এখনো সরানো হয়নি পাঁচটি খালের মুখের বাঁধ। তাছাড়া চসিক পরিষ্কার করেনি ৩ ফুটের বড় নালা-নর্দমা এবং খালগুলো। কার্যত এসব কারণেই তলিয়ে যায় প্রায় পুরো নগর।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর