খুলনায় ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে অবৈধভাবে নবজাতক কেনাবেচা চক্রের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। এর মধ্যে নগরীর গল্লামারীতে সুন্দরবন ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত ক্লিনিক মালিক, ভুয়া চিকিৎসক, প্রসূতিসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রি করা নবজাতককে উদ্ধার ও ক্লিনিক থেকে শিশু বেচাকেনার স্ট্যাম্প, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও নিম্নমানের চিকিৎসা সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল দুপুরে খুলনার লবণচরায় র্যাব-৬ এর কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজ। জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিসের নির্দেশে ওই ক্লিনিককে সিলগালা করা হয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে ওই ক্লিনিকে এসে তামান্না ওরফে তমা নামের প্রসূতি অবৈধ গর্ভপাত ও নবজাতক কন্যাশিশুকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন- এমন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে ক্লিনিকে অভিযান চালায় র্যাব। জানা যায়, খুলনার স্বনামধন্য চিকিৎসকদের নাম ব্যবহার করে ওই ক্লিনিকে অপারেশন করতেন ক্লিনিক মালিক বেবী চন্দন রায়ের স্বামী তুষার কান্তি মণ্ডল। তিনি নিজেকে বড়মাপের চিকিৎসক পরিচয় দিলেও চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে তার কোনো সনদপত্র নেই। ২০১২ সাল থেকে ক্লিনিকটিতে অবৈধ গর্ভপাত ও পাচারের মতো কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। শুক্রবার রাতে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ক্লিনিকের ঝাড়ুদার ও তার বোনের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকায় নবজাতককে বিক্রির চুক্তি করা হয়। খুলনার সাচিবুনিয়া এলাকার মজনুর রহমান ও লাজলী দম্পতি ওই নবজাতককে কিনতে ক্লিনিকে উপস্থিত হন। অভিযানে তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে।গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- ভুয়া চিকিৎসক তুষার কান্তি মণ্ডল (৪৫), ক্লিনিক মালিক বেবী চন্দন রায় (৩২) প্রসূতি তামান্না ওরফে তমা (২৬), প্রসূতির বাবা সোহরাব হাওলাদার (৬৫), মজনুর রহমান (৪৫), মহিদুল ইসলাম (২৭), শামীম হোসেন (১৮), লাজলী খাতুন (৩০), লাকী আক্তার (৪৮) ও হোসনে আরা বেগম (৪৫)।
র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রওশনুল ফিরোজ জানান, গ্রেফতারকৃতরা অবৈধ গর্ভপাত ও নবজাতক পাচারের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত। ক্লিনিক থেকে বাচ্চা ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিনামার ৩টি রেভিনিউ স্ট্যাম্প, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, নিম্নমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ও মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। তিনি জানান, প্রসূতিসহ ওই ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অন্য রোগীদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। নবজাতককে র্যাবের প্রহরায় তার মায়ের কাছে রাখা হয়েছে।