করোনা মহামারীর সংকট মাথায় রেখে নতুন অর্থবছরের জন্য (২০২১-২২) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। করোনা মহামারী মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে জোর দিয়ে গতকাল চলতি অর্থবছরের নতুন এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার আলোকে ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ঋণের মোট অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ পূর্ববর্তী অর্থবছরের ৪৭২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় হ্রাস পেয়ে ৩৮০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি হিসাবে এরূপ ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও দেশে সরাসরি নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহসহ আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের নিকট থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ প্রাপ্তির ফলে সামগ্রিকভাবে আমাদের লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯২৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
, যা ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে উপচিতি চাপ সৃষ্টি করে। এ চাপ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা বাজার হতে নিট ৭৭০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্রয় করে, যা ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানের উপচিতির প্রবণতা হ্রাস করে বহির্বিশ্বে রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অক্ষুণœ রাখতে সাহায্য করে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের রাজস্ব বাজেটে ঈপ্সিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি অর্জনে আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ভঙ্গি এবং অর্থ ও ঋণ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, মুদ্রা সরবরাহের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নিরাপদ রাখার জন্য মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক ব্যবস্থা হতে নিট ৭৬৫ বিলিয়ন টাকা বা ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি খাতের জন্য নিট ১৭৬০ বিলিয়ন টাকা বা বার্ষিক ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধির সংকুলান রাখা হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে নিট অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১০ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি জোরদার, কৃষি, সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প, রপ্তানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ইতিমধ্যে গৃহীত পুনঃঅর্থায়ন স্কিম বর্ধিতকরণ করা হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ইত্যাদির জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করা, নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ৫০০ কোটি টাকার এবং তফসিলি ব্যাংকসমূহের পরিচালন মুনাফার ১ শতাংশ নিয়ে গঠিত স্টার্ট আপ ফান্ডের আকার পর্যায়ক্রমে বর্ধিত করা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্লাস্টার অ্যান্ড ভ্যালু চেইন এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ব্যাংকের অর্থায়ন বৃদ্ধিকল্পে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম কার্যকরভাবে চালু করা এবং অর্থনীতিতে মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।