প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব। রাজি না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ফেসবুক মেসেঞ্জারে হুমকি প্রেমে জড়ানোর জন্য। নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে দেখে নেওয়ারও হুমকি। ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের দিয়ে তুলে নেওয়ারও হুমকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর কয়েকদিন পর থেকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে এভাবেই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছিলেন প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী। অতিষ্ঠ হয়ে ফেসবুকে কিছু মেসেজের স্কিনশট দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিকার চান ওই ছাত্রী। উল্টো ফটোশপে ছবি বিকৃতি করে ফেক আইডিতে এবং বিভিন্ন পেজে পোস্ট করে ওই বখাটে। এ ছাড়া আরও কিছু ফেক আইডি থেকে নোংরা কথাবার্তা লিখে প্রতিদিন মেসেজ করে। এ ঘটনা চলতি বছরের মে মাসের। মার্কেটিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন কর্তৃক সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছিলেন এক ছাত্রী। শুধু এই শিক্ষার্থীই নন, বিভিন্ন বিভাগের ২৪ জনের বেশি ছাত্রী ফারুকের বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা তার শাস্তির দাবি জানান। এমনকি মানববন্ধনও হয়। পরে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
শিক্ষার্থীদের দাবি, শুধু ফারুক নয়, তার মতো আরও কিছু শিক্ষার্থীর দ্বারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন অনেক ছাত্রী। আর এটা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় না আনা।
সর্বশেষ ২০ আগস্ট ক্র্যাশ অ্যান্ড কনফেশন পেজে একসঙ্গে ৭৩ ছাত্রীর ছবি জুড়ে দিয়ে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। স্ট্যাটাসে নিজেদের ছবি দেখে কার্যত ভেঙে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত সামনে এলেও প্রশাসন বলছে এখনো শনাক্ত হয়নি। সেজন্য আইসিটি সেল কাজ করছে। তবে উপাচার্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান।শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়, করোনাকালে সাইবার বুলিং ঘটেছে অসংখ্য। কোনোটারই দৃশ্যমান কোনো শাস্তি হয়নি।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর অপরিচিত আইডি থেকে গণিত বিভাগের এক ছাত্রীর ছবির ওপর ফোকলোর বিভাগের এক ছাত্রের মোবাইল নম্বর বসিয়ে ‘আমাকে কল করুন, আমার কাছে সব পাবে (বাকিটা লেখার অযোগ্য)’ লিখে স্ট্যাটাস দেয়। এ নিয়ে ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়। কিন্তু সময়ের আবর্তে বিষয়টি ঢাকা পড়ে যায়।
গুটিকয় ঘটনা সামনে এলেও আড়ালে আরও বড় ঘটনা থেকে যায়। আত্মসম্মানের ভয়ে অনেক ছাত্রীই তা প্রকাশ করেন না। রাজনৈতিক ছাত্রনেতা, সামাজিক সংগঠনের নেতা এমনকি শিক্ষকরাও বাদ নেই সাইবার বুলিং কান্ডে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এগুলো ছাড় দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যাবে। আগের ঘটনাগুলোরও বিচার হবে। সংবাদমাধ্যমসহ বেশ কিছু সূত্রে ২০ আগস্টের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। তবে অফিশিয়ালি পদক্ষেপ নিতে গেলে আমাদের ডকুমেন্টস লাগবে। আইসিটি সেল ডকুমেন্টস বের করার জন্য কাজ করছে। তারপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপে যাব।’