বিদ্যুৎ নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় রয়েছে বরিশালের রসুলপুর চরের সহস্রাধিক পরিবার। সরকারি জমিতে বসবাস, তাই নিজেদের নামে বৈদ্যুতিক মিটার পাচ্ছেন না তারা। বাধ্য হয়ে একটি সমিতি কার্যালয়ের মিটার থেকে ৪০০ সাব মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন তারা। এতে একদিকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছেন বস্তির অন্তত ৮ হাজার মানুষ। আবাসিক লাইনে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৭৫ পয়সা হলেও বস্তিবাসীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বাণিজ্যিক সংযোগের বিল হিসেবে প্রতি ইউনিট সাড়ে ১২ টাকা হারে। সম্প্রতি ওই চরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। তার নিয়োজিত আনিস ও পরশ নামে দুই ব্যক্তি পাকা মেমোর মাধ্যমে সাব মিটারের প্রতি মাসের বিল আদায় করলেও প্রায়ই তারা সরকারি কোষাগারে বিল জমা না দেওয়ায় বস্তিবাসীর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিকে ১৩ লাখ ৪৬ টাকা বিল বকেয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে রসুলপুর বস্তির (কলোনি) মূল মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটি পরিবারকে আলাদা বৈদ্যুতিক মিটার দেওয়ার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যক্তিগত রেকর্ডীয় জমিতে বসতি স্থাপন ছাড়া বৈদ্যুতিক মিটার দেওয়ার বিধান নেই তাদের। বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড খালের অপর পাশে কীর্তনখোলা নদীর তীরে রসুলপুর বস্তির অবস্থান। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় কীর্তনখোলা নদীর নাব্য বাড়াতে ড্রেজিং করে বিআইডব্লিউটিএ। তৎকালীন হুইপ ও মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ারের উদ্যোগে ওই পলিমাটি ফেলা হয় নদীর তীরে। ধীরে ধীরে সেখানে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে ভূমিহীন, ছিন্নমূল এমনকি প্রভাবশালীরাও। কিন্তু ওই চরে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা কমিউনিটি সেন্টার কিছুই ছিল না। চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ২০১০ সালে ওই চরে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি (সিডিসি) নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ, বাতি, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, কমিউনিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করেন। কিন্তু চরবাসীর বসবাস সরকারি খাস খতিয়ানে হওয়ায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক মিটার দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ওই সময় সিডিসি কার্যালয়ের বৈদ্যুতিক মিটার থেকে সাব-লাইন নিয়ে সাবমিটারের মাধ্যমে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করেন তৎকালীন মেয়র হিরণ। এভাবে ৪০০ সাবমিটারে চলছে হাজারো বস্তিবাসীর বিদ্যুৎ ব্যবহার। চরে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড বরিশালের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত রেকর্ডীয় জমি না হলে সেখানে বৈদ্যুতিক মিটার দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এ কারণে একটি সমিতি কার্যালয় থেকে ৪০০ সাবমিটারের মাধ্যমে ওই চরের বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে নগরীর অন্য বস্তিগুলো খাস জমিতে থাকার পরও সেখানে ঘরে ঘরে বৈদ্যুতিক মিটার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই বস্তির বাসিন্দা মো. সবুজ হাওলাদার।