তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সমাজের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একজন সাংবাদিক সমাজকে যেমন পথ দেখাতে পারেন, তেমনি একজন সাংবাদিকের মিথ্যা, ভুল সংবাদের কারণে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। সেজন্য সংবাদকর্মী, সংবাদপত্র এবং পাঠকসমাজের অধিকার রক্ষায় প্রেস কাউন্সিলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেস কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করতে প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গতকাল রাজধানীর তথ্য ভবনে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ সেমিনার ও প্রেস কাউন্সিল পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের প্যানেল চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, সচিব মো. মকবুল হোসেন, প্রেস কাউন্সিলের সদস্য, সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক এবং নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের সিইও নঈম নিজাম বক্তব্য রাখেন। ‘বাঙালির সব সাহসের উচ্চারণ বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রয়াত সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ারকে প্রেস কাউন্সিলের আজীবন সম্মাননা পদক (মরণোত্তর), দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকাকে প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা, চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণকে আঞ্চলিক প্রাতিষ্ঠানিক সম্মাননা, গ্রামীণ সাংবাদিকতায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাবেক সিনিয়র রিপোর্টার নিজামুল হক বিপুল, উন্নয়ন সাংবাদিকতায় নিউজ টুডের সিনিয়র সাংবাদিক মাযহারুল ইসলাম মিচেল, নারী সাংবাদিকতায় ডেইলি অবজারভারের বনানী মল্লিক ও ফটোসাংবাদিকতায় বাংলা ট্রিবিউন অনলাইনের মো. সাজ্জাদ হোসেনের হাতে পদক তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আমি সব সময় বলি, একজন সাংবাদিকের অনেক ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হয়। দেশে দৈনিক পত্রিকা ১২শ, মোট পত্রিকা ৪ হাজারের বেশি। অন্যদিকে টেলিভিশন ৪০টি। গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার কারণে যেন অন্যের স্বাধীনতায় আঘাত না লাগে সেজন্য প্রেস কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেজন্য প্রেস কাউন্সিলকে আরও শক্তিশালী করতে প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ, বর্তমান আইনটি যথেষ্ট নয়। অনুষ্ঠান শেষে হলরুম থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেবের কথায় তার দলের নেতা-কর্মীরাই সাড়া দেয় না। তার মুখে গণআন্দোলনের ডাক শোভা পায় না। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের গণঅভ্যুত্থানের ডাক সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ফখরুল সাহেব যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েক শ নেতা-কর্মী আর কিছু টোকাই নিয়ে যে গণঅভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছেন, তা হাস্যকর। এই কথা তারা গত সাড়ে ১২ বছর ধরে বলে আসছেন। আসল কথা হচ্ছে, মির্জা ফখরুল সাহেবদের কথায় এখন কর্মীরাও সাড়া দেয় না।
‘আওয়ামী লীগ ছদ্মবেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে’ বিএনপির এ মন্তব্যের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং দেশে বহুদলীয় বহুমাত্রিক গণতন্ত্র বিদ্যমান। জাতীয় সংসদে বিএনপিসহ বহুদলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। মির্জা ফখরুল সাহেব নিজেই সকাল-বিকাল সরকারের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ সমালোচনা করছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, বাকস্বাধীনতাও রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এগিয়ে আসছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া নির্ধারিত সময়ের আগে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে অতীতে এমন নজির নেই। কাজেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। পৃথিবীর নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের নেতা ছিলেন জাতির পিতা। তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারী খুনি মোশতাক আর মূল পরিকল্পনাকারী জিয়াউর রহমান। হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু এই মূল পরিকল্পনাকারী জিয়াউর রহমানের বিচার হয়নি। তার মুখোশ উন্মোচিত করা হবে জাতির সামনে। এ জন্যই আমার রাজনীতি। তথ্যসচিব মো. মকবুল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা সরকারি কর্মকর্তা হতে পারতাম না। এখন একটি উন্নয়ন প্রকল্প পাস করতে তিন বছর মেয়াদ চলে যায়। আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরে যতগুলো আইন করলেন, সেই আইনের ওপর চলছে দেশ। একটি সংবিধান জাতিকে উপহার দিলেন, যেটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংবিধানের অন্যতম। সাংবাদিক নেতা, ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক এবং প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য নয়। এটার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা। কারণ ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য হত্যা করা হলে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শিশু রাসেলসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হতো না। সেই খুনি চক্র এখনো সক্রিয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এই সময়ে দেশের জন্য সব কিছু করে গেছেন। এখন যেখানেই হাত দেওয়া যায় সেখানেই তাঁর হাতের ছোঁয়া পাওয়া যায়। প্রেস কাউন্সিলের সদস্য, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক এবং নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের সিইও নঈম নিজাম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন সাহসী নেতা। স্বপ্ন সবাই দেখতে পারেন, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেন না। জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেটাকে বাস্তবায়ন করেছেন। একটি জাতি, একটি দেশ উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। ইতিহাসের অমরত্ব সবাই ধারণ করতে পারেন না। কিন্তু জাতির পিতা সেটা করেছেন। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ একটা শব্দ। ইতিহাসের মহানায়ক। তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা হবে না। তিনি বলেন, জাতির পিতা পৃথিবীতে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই বাংলাদেশকে বিশ্বে নতুন মর্যাদায় নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে নতুন মাত্রায়, নতুন যাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।