সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সিলেটে গ্যাসলাইনের ওপর থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ

ওয়াকওয়ে করবে সিসিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

মাটির নিচ দিয়ে চলে গেছে উচ্চ চাপবিশিষ্ট গ্যাস লাইন। ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে একতলা থেকে শুরু করে পাঁচতলা পর্যন্ত ভবন। বছরের পর বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক। অথচ উচ্চ চাপবিশিষ্ট গ্যাস লাইনের উভয় পাশে ১০ ফুট করে মোট ২০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের নিয়ম নেই। লাইন স্থাপনের সময় এই জায়গাও অধিগ্রহণ করেছে জালালাবাদ গ্যাস। গ্যাসের মালিকানাধীন জায়গায় অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে এতদিন বেশ ভালোই ভোগদখল করে আসছিলেন প্রভাবশালীরা। কিন্তু চলতি বছর থেকে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নামলে মাথায় হাত পড়ে ভবন মালিকদের। গতকাল সিলেট নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালিবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জালালাবাদ গ্যাস ও সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। উদ্ধার করা ভূমি যাতে পুনরায় বেদখল না হয়ে যায়, এ জন্য দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। জানা গেছে, দেবপুর থেকে কুমারগাঁও পর্যন্ত জালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কয়েক শ কিলোমিটার উচ্চ চাপবিশিষ্ট সঞ্চালন লাইন রয়েছে। গ্যাস লাইন স্থাপনের সময় উভয় পাশের ১০ ফুট করে অধিগ্রহণ করে গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এরপর নজরদারি না থাকায় গ্যাস লাইনের ওপর ও উভয় পাশে প্রভাবশালীরা গড়ে তোলেন স্থাপনা। পাঁচতলা পর্যন্ত ভবন তৈরি করেন কেউ কেউ। ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে কেউ কেউ জালালাবাদ গ্যাসের মালিকানাধীন জায়গার দখল বিক্রিও করেন। গত বছর নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে মসজিদের কয়েকজন মুসল্লির মৃত্যুর ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ১৬ মার্চ থেকে শুরু হয় উচ্চ চাপবিশিষ্ট গ্যাস লাইনের জায়গা দখলমুক্ত অভিযান।

চিহ্নিত করা হয় পাঁচশতাধিক অবৈধ স্থাপনা। ১৬ মার্চের পর ২৬ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর আরও দুই দফা অভিযান চালানো হয়। ওই সময় প্রায় ৩০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের ওপর ও উভয় পাশ থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সর্বশেষ গতকাল সকালে সিসিকের সহযোগিতায় নগরীর কালিবাড়ি এলাকায় অভিযান চালায় জালালাবাদ গ্যাস। উচ্ছেদ করা হয় অন্তত ৪০টি স্থাপনা। তবে স্থাপনার মালিকদের অনেকে বলছেন, বংশপরম্পরায় তারা বাসাবাড়ি করে এই জায়গায় বসবাস করছেন। তাদের স্থাপনা যে অবৈধ তাও তারা জানেন না। জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষও এর আগে তাদের কোনো নোটিস করেনি। হঠাৎ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ায় তারা এখন বাস্তুহারা হয়ে গেছেন।

তবে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, এর আগে অনেকবারই নোটিস দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। আর যারা স্বেচ্ছায় সরাননি তাদের স্থাপনা অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। জালালাবাদ গ্যাসের অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে স্থাপিত বসতবাড়ি উচ্ছেদ সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব, কোম্পানির ডিজিএম আমিরুল ইসলাম বলেন, গ্যাস নিরাপত্তা আইনে রয়েছে উচ্চ চাপবিশিষ্ট গ্যাস পাইপলাইনের উভয় পাশে ন্যূনতম ১০ ফুট করে মোট ২০ ফুটের মধ্যে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা বিধিবহির্ভূত। অভিযানের পূর্বে বছরখানেক সময় ধরে কয়েকবার দখলদারদের নোটিস দেওয়া হয়। পাশাপাশি মৌখিকভাবেও তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় জননিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অভিযান চালানো হচ্ছে।

এদিকে, উচ্ছেদ অভিযানের পর ফের যাতে গ্যাসের মালিকানাধীন জায়গা দখল না হয় সে জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, বালুচর থেকে কুমারগাঁও পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর সেখানে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। ওয়াকওয়ের উভয় পাশে বাগান করা হবে। যাতে পুনরায় কেউ এই জায়গা দখল করতে না পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর