শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’

দ্বিতীয় জীবনের পথে আকিব

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নির্মমভাবে আহত হন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি জে আকিব। পরে তার কঠিন অস্ত্রোপচার হয়। আকিবের মাথার হাড়টি রাখা হয় অন্যত্র। মাথায় ব্যান্ডেজের ওপর লিখে দেওয়া হয় ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’। দেশজুড়ে আলোচিত হয় লেখাটি। সেই আকিব এখন সুস্থ হওয়ার পথে। আগের তুলনায় শারীরিক অবস্থা এখন অনেক ভালো। চিকিৎসকরা এখন তাকে নিয়ে শঙ্কামুক্ত। ফলে অনেকটা দ্বিতীয় জীবনের পথে আকিব। চিকিৎসায় করণীয় নিয়ে আগামীকাল একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন। জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়। আহত হন মেডিকেল কলেজ ছাত্র মাহফুজ ও নাইমুল। সংঘর্ষের জেরে পরদিন সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে মাত্র ৫০ সেকেন্ডেই ৮-১০ যুবক মাহাদি জে আকিবের ওপর হামলা চালিয়ে থেঁতলে দেয় তার মাথার খুলি। ওই দিনই কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং সন্ধ্যা ৫টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে আকিবের জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। জখম গুরুতর হওয়ায় আকিবের পুরো মাথায় লাগানো হয় সাদা ব্যান্ডেজ। চিকিৎসকরা তাতে লিখে দেন ‘হাড় নেই, চাপ  দিবেন না।’ এ লেখাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হৃদয় নাড়া দেয় মর্মস্পর্শী এ লেখাটি। আকিব চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ বলেন, ‘আকিব আগের তুলনায় অনেক ভালো। ইতিমধ্যে যেহেতু কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি, তাই তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যায়। এখন মুখ দিয়ে তরল খাবার খেতে পারছে, উঠে বসছে। তবে প্রথম অস্ত্রোপচারের দেড় মাস পর তার দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করা হবে। তখন হাড়টি পুনঃস্থাপন করা হবে। এরপর বোঝা যাবে তার শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আকিবের মাথায় যে স্পর্শকাতর অপারেশন হয়েছে, তা অনেক ক্রিটিক্যাল।

চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক ছিলেন বলে সফল একটি অস্ত্রোপাচার সম্ভব হয়েছে। আশা করি, বাকি চিকিৎসাও আন্তরিকতার সঙ্গে সফলভাবে সম্পন্ন হবে।’

আকিবের দেখভাল করা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৬০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অভিজিৎ দাশ বলেন,  ‘আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো। হালকা কথা বলতেছে, মানুষও চিনতে পারছে। আশা করি, সবার সহযোগিতা ও আন্তরিকতায় সে আবারও আমাদের মাঝে ফিরে আসবে।’

জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। ৩০ অক্টোবর রাতে পাঁচলাইশ থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৬-৭ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান। এর মধ্যে এনামুল হাসান সীমান্ত ও রক্তিম দে নামের এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে রাতেই হাসপাতালের গেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।     

একই ঘটনায় গত ৩১ অক্টোবর রবিবার রাতে মাহমুদুল হাসান নামে এক ছাত্রলীগ নেতা চকবাজার থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ ও কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।  

গত ৩ নভেম্বর নগরীর চকবাজার থানায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী ইমন সিকদার বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায়ও ১৬ জনকে আসামি করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর