চট্টগ্রাম-কক্সবাজার কারাগারের বিদেশি বন্দীর সিংহভাগই মাদক মামলার আসামি। যাদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা নাগরিক। তারা ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ পাচার করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দাবি, গ্রেফতার রোহিঙ্গাদের প্রায় সবাই মাদকের ক্যারিয়ার। মাদক মাফিয়াদের ফাঁদে পড়ে পাচারে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম কারাগারের বিদেশি বন্দীদের প্রায় সবাই মাদক মামলার আসামি। তারা মাদক বিক্রি কিংবা পাচারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। কক্সবাজার কারাগারের জেলার মোস্তাফা কামাল জানান, কক্সবাজার কারাগারে প্রায় ৮০০ বিদেশি বন্দী রয়েছেন। বিদেশি বন্দীদের প্রায় সবাই মিয়ানমারের নাগরিক ও মাদক মামলার আসামি। মাদকসহ রোহিঙ্গা গ্রেফতারে একাধিক অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক তপন শর্মা বলেন, ‘এ বছর কয়েকজন রোহিঙ্গাকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। তারা মূলত ইয়াবার ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার পথে গ্রেফতার হয়।’ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিদেশি বন্দী রয়েছেন ১০২ জন। তাদের মধ্যে ১০০ জনই মিয়ানমারের নাগরিক। বাকি দুজন ভারত ও চীনের নাগরিক। কেন্দ্রীয় কারাগারে বিদেশি বন্দীদের প্রায় সবাই মাদক মামলার আসামি। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মাদক পাচার করার সময় গ্রেফতার হন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। একইভাবে কক্সবাজার কারাগারে বন্দী রয়েছেন প্রায় ৮০০ রোহিঙ্গা নাগরিক। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই মাদক মামলার আসামি।
জানা যায়, মরণনেশা ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথের ট্রানজিট পয়েন্ট কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্প ঘিরে গড়ে উঠেছে রমরমা মাদক ব্যবসা। শরণার্থী ক্যাম্প থেকেই মাদক পাচার করতে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। মাদক মাফিয়ারা শরণার্থী ক্যাম্পের মাঝিদের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের মোটা অঙ্কের প্রলোভন দেখিয়ে ইয়াবা পাচার কাজে প্রলুব্ধ করে। কেউ রাজি হলে ক্যাম্পের মধ্যেই মাদক চালানের ‘বডি ফিটিং’ করা হয়। এরপর তাদের ইয়াবার চালান দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। অধিকাংশ চালান পাচারের জন্য মাদক ব্যবসায়ীদের বহুল প্রচলিত ‘ফিশিং’ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। শরণার্থী ক্যাম্প থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচারের সময় গ্রেফতার হয় কিছু রোহিঙ্গা।
চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দাবি, বর্তমানে ইয়াবা ব্যবসার ৯৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। এ ছাড়া ইয়াবা বহন এবং খুচরা ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইয়াবা মজুদ ছাড়াও বডি ফিটিংও করা হয়।