শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি লাগামহীন খুলনায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনায় স্বাস্থ্য খাতে অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে দুর্নীতি-অনিয়ম মাথাচাড়া দিয়েছে। এরই মধ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরের অভিযোগে সিভিল সার্জন অফিসের সাবেক হিসাবরক্ষক গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তবে গত এক মাসেও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। এ ছাড়া গতকাল জেনারেল হাসপাতালে করোনা নমুনা পরীক্ষার ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ ঘটনায় ল্যাব ইনচার্জ প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জামান বাদী হয়ে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করেন। দুদক কর্মকর্তা খন্দকার কামরুজ্জামান জানায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার ফি বাবদ জেনারেল হাসপাতালে ৪ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা আদায় হয়। ওই টাকা থেকে ১ কোটি ৬৬ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। বাকি ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৭ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ করেন প্রকাশ কুমার। এ ঘটনা জানাজানি হলে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কর্মস্থলেও অনুপস্থিত রয়েছেন। এর আগে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের স্টেনোগ্রাফার ফরিদ আহমেদ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় স্ত্রীসহ গ্রেফতার হয়। বর্তমানে মামলায় তারা জামিনে রয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতির ঘটনায় ওপরের স্তরের কর্মকর্তারা জড়িত থাকলেও তদন্তে তারা আড়ালে থেকে যায়। জেনারেল হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার টাকা লুটপাটে জড়িত প্রকাশ কুমার দাসকে একক ক্ষমতাবলে ওই কাজের দায়িত্ব দেয় সাবেক একজন সিভিল সার্জন। কিন্তু তদন্তে তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠেনি। আউটসোর্সিং ঠিকাদার নিয়োগকালে বদলি হওয়ার পরও ওই সিভিল সার্জনের মেয়াদ বাড়িয়ে তাকে কর্মস্থলে রেখে ওই সময় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেয় সিন্ডিকেট চক্র।

দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান জানান, স্বাস্থ্য খাতের এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আঁতাত করে গত কয়েক বছরে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি সিন্ডিকেট চক্র। কয়েকটি ঘটনায় মামলা হলেও আসামিরা আত্মগোপনে রয়েছে। ১৯ অক্টোবর গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু পুলিশ তাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, গোলাম কিবরিয়া ‘ধর্মীয় চিল্লার’ নামে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিরুদ্দেশ রয়েছে। খুলনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানাজানি হলেও প্রকাশ কুমার দাসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে কালক্ষেপণ করা হয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও সিভিল সার্জন অফিসের পক্ষ থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা জানিয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে তার নিকটাত্মীয়রা চাকরিরত থাকলেও তাদেরকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর