সোমবার, ২২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কে শ্রমিকবেশে ছিনতাই!

নিজস্ব প্রতিবেদক

কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ অটোরিকশা চালক, আবার কেউ দিনমজুর। দিনের কর্মযজ্ঞ শেষে রাতে একত্র হন তারা। এরপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তা-টাঙ্গাইল অংশে ফাঁকা ও নির্জন স্থানে অটোরিকশা নিয়ে নেমে পড়েন। সুযোগ বুঝে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও সিএনজি আটকে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নেন। গত ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোড় এলাকায় গলা কাটা এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়। তার নাম মেহেদী হাসান তুহিন (২৩)। তিনি গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। ক্লু-লেস এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে শ্রমিকের ছদ্মবেশে রাতে ছিনতাই চক্রের ১২ সদস্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল রাজধানীর মালিবাগে সংস্থাটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল আলম, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান ও খায়রুল আমিন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, মেহেদী হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনসহ শ্রমিকের আড়ালে ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অটোরিকশাসহ নগদ অর্থ ও পাঁচটি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়। মেহেদীর বাড়ি গাজীপুরের বাসন থানার মজলিশপুর কাজীপাড়ায়। তার বাবা রফিকুল ইসলাম। মেহেদী লেখাপড়ার পাশাপাশি গত ছয় মাস ধরে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর রুনু সুপার মার্কেটের একটি অপ্পো মোবাইল কোম্পানির দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ওই ঘটনায় বাসন থানায় মামলা হলে সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে ক্লু-লেস মামলার রহস্য উন্মোচন করে। অভিযান চালিয়ে মেহেদী হত্যায় জড়িত সুমন হোসেন ও হযরত আলীকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। পেশায় দুজনই ইট-বালুর শ্রমিক। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে বাসের হেলপার মাসুদ রানা, ইট-বালুর শ্রমিক অলিয়ার রহমান (রাজু) ও অটোচালক ফখরুল ইসলামকে ছিনতাইকালে ব্যবহৃত অটোরিকশাসহ ডেমরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আশপাশের এলাকায় নির্দিষ্ট অটোবাইক নিয়ে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় যাত্রী ও পথচারীদের টার্গেট করে ছিনতাই করে। কেউ ছিনতাইকালে বাধা দিলে তাদের সঙ্গে থাকা ধারালো চাপাতি, লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আর মেহেদী গত ১২ নভেম্বর কোনাবাড়ীর রুনু মার্কেটের ‘লোটাস টেলিকম’ থেকে কাজ শেষে মজলিশপুরের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। নাওজোড় এলাকার আবদুল মালেক সরকার নিউ সুপার মার্কেটের সামনে পৌঁছলে তার কাছে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তারা। মেহেদী বাধা দেয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে মেহেদী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে ধারালো চাপাতি দিয়ে গলা কেটে দ্রুত পালিয়ে যায়। সিআইডি জানায়, তাদের দিনের কর্মযজ্ঞ দেখে কারও বোঝার উপায় নেই ওরাই রাতের ভয়ংকর ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তারা গত দুই বছর ধরে ছিনতাইয়ে জড়িত। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে মাসুদ রানা একাধিক মামলার আসামি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর