শিরোনাম
বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সৌদিতে বিমানের জিএসএ নিয়োগে অনিয়ম

বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা

বিশেষ প্রতিনিধি

সৌদি আরবজুড়ে বাংলাদেশ বিমানের টিকিট বিক্রির কমিশনের এজেন্ট (জিএসএ) নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম ও অনৈতিক কান্ড ঘটানোর অভিযোগ ওঠেছে। যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের বিতর্কিত কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ। এতে বিমানের বাণিজ্যিক পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। যে প্রতিষ্ঠানকে জিএসএ-এর কাজ দেওয়া হয় তার নাম ইলাফ। এই কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হলে কমপক্ষে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি গচ্চা যাবে বিমানের। ইলাফের কাগজপত্র জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও সেটি আমলে নেওয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

জানা গেছে, বিমানের মার্কেটিং শাখার একটি চক্র মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে ইলাফকে জিএসএ দিচ্ছে। সব প্রক্রিয়া শেষে আইন শাখার মতামত চেয়ে পাঠানো হয়েছে। দরপত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ে টিকে যাওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অত্যন্ত গোপনে শুধু ইলাফকেই কমিশনের দরকষাকষির প্রস্তাব দিয়েছে বিমান। গোটা সৌদি আরবে বিক্রীত টিকিটের ওপর শতকরা ১ রিয়াল ৭৮ হালালা কমিশনের অফার দিয়েছে ইলাফ। অন্যদিকে এটি জানতে পেরে এসিই নামক প্রতিষ্ঠানটি তার চেয়ে আরও ৫ হালালা কম দরের অফার দেয়। কিন্তু সেটি বিমান ম্যানেজমেন্ট গোপন রেখে তড়িঘড়ি করে ইলাফকে কার্যাদেশ প্রদানের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। এখন চলছে চূড়ান্ত স্বাক্ষরের আগে লিগ্যালের মতামত নেওয়া। এ অবস্থায় এসিই বিমান প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও এমডির কাছে চিঠি দিয়েও এসব কেলেংকারি থামাতে পারেনি। বিমানের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে মার্কেটিং বিভাগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এসিইকে অযোগ্য দেখিয়ে ইলাফকে যোগ্য হিসেবে বাছাই করে।

সৌদি আরব থেকে হাসান নামের এক প্রবাসী ট্রাভেল ব্যবসায়ী জানান, ইলাফের রিয়াদে কোনো অফিস নেই। এখন তারা এসিই-এর অফিস ভাড়া নেওয়ার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছে। এমন একটি অযোগ্য কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হলে বিমান শুধু আর্থিকভাবেই বছরে আগামী তিন বছরে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। পাশাপাশি বিমানের বাণিজ্যিক ভিতও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে সৌদিতে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়- ইলাফ এমন একটি কোম্পানি যার শুধু জেদ্দায় একটি অফিস আছে। রিয়াদ, দাম্মাম ও মদিনায় কোনো অফিস নেই। অন্যদিকে এসিই-এর অফিস রয়েছে এই তিনটি স্থানেই। এ অবস্থায় ইলাফের পক্ষ থেকে বিমানের ম্যানেজার মামুন রিয়াদে এসিই-এর অফিস ভাড়া নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বিমানের সাবেক পরিচালক বলেন, যেখানে রিয়াদের মতো জায়গায় ইলাফের অফিসই নেই সেখানে কি করে তাদের জিএসএ দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হলো? বিমানের মার্কেটিং শাখার এত ইলাফ-প্রীতি কেন। 

সৌদি আরবে জিএসএ নিয়োগ সম্পর্কে বিমানের সাবেক পরিচালক জানান, এটা খুবই লোভনীয়। বিমান বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করে থাকে রিয়াদ ও জেদ্দা জিএসএ দ্বারা। যার কমিশন আসে কোটি কোটি টাকা। তাই যখনই চুক্তি নবায়নের সময় হয় তখনই সক্রিয় হয়ে ওঠে একটি চক্র। এবার যে তিনটি কোম্পানিকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে তার মধ্যে ইলাফ ও মোসাইদ পাকিস্তানি কোম্পানি। এসিই সৌদি মালিকাধীন। যার রয়েছে বিমান ও ডেল্টা এয়ারসহ বিশ্বের শীর্ষ এক ডজন এয়ারলাইনসের জিএসএ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর