বুধবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে ৩ গুণ বাড়ছে পানির দাম

ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা দেউলিয়া হয়ে পড়া ওয়াসার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে এক লাফে ৩ গুণ বাড়ছে পানির দাম। রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন মূল্য কার্যকর করবে। বেশি দামে পানি বেচে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা দেউলিয়া হয়ে পড়া ওয়াসার।

রাজশাহী ওয়াসাসূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি ১ হাজার লিটার পানি উত্তোলন, পরিশোধন ও সরবরাহে ওয়াসার খরচ ৮ টাকা ৯০ পয়সা। এত দিন আবাসিক সংযোগে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ধরা হতো ২ টাকা ২৭ পয়সা। তা বেড়ে হচ্ছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা। বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি থেকে ১ হাজার লিটার পানির মূল্য ধরা হবে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা। এখন এ পানির দাম ৪ টাকা ৫৪ পয়সা। আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয়ের ক্ষেত্রেই পানির দাম পুরোপুরি ৩ গুণ বাড়ানো হচ্ছে।

আবাসিক ও বাণিজ্যিক যেসব সংযোগে মিটার নেই সেগুলোর ক্ষেত্রে সংযোগ পাইপের ব্যাস ও ভবনের তলার ওপর নির্ভর করে মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। আবাসিকে আধা ইঞ্চি পাইপে নিচতলার জন্য মাসে সর্বনিম্ন ১৫০ আর ১০ তলার জন্য ৮২৫ টাকা মূল্য ধরা হবে। ১ ইঞ্চি পাইপে নিচতলায় ৩৭৫ আর ১০ তলায় ২ হাজার ৭০ টাকা। দ্বিতীয় থেকে নবম তলা পর্যন্ত কিংবা ১০ তলার ওপরের তলার জন্য পানির বিল আনুপাতিক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যে কোনো ধরনের আবাসিক ভবনে দেড় ইঞ্চি পাইপে ৫ হাজার ৬২৫, ২ ইঞ্চিতে ৭ হাজার ৫০০, ৩ ইঞ্চিতে ৯ হাজার ৩৫০ ও ৪ ইঞ্চিতে ১১ হাজার ২৫০ টাকা ধরা হয়েছে। বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে নিচতলায় আধা ইঞ্চি পাইপে মাসিক ৩০০ আর ১০ তলায় ১ হাজার ৬৫০ টাকা মূল্য ধরা হয়েছে। ১ ইঞ্চি পাইপে নিচতলায় ৭৫০ আর ১০ তলায় ৪ হাজার ১৪০ টাকা ধরা হয়েছে। দ্বিতীয় থেকে নবম ও দশম তলার ওপরের তলার জন্য বিল বাড়বে আনুপাতিক হারে। বাণিজ্যিকে দেড় ইঞ্চি পাইপের জন্য ১১ হাাজর ২৫০, ২ ইঞ্চিতে ১৫ হাজার, ৩ ইঞ্চিতে ১৮ হাজার ৭৫০ ও ৪ ইঞ্চিতে ২২ হাজার ৫০০ টাকা ধরা হয়েছে।

 

রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘রাজশাহী ওয়াসা বোর্ড ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন নিয়েই পানির মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন মূল্য কার্যকর হবে।’

এক লাফে ৩ গুণ মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টিকে আমরা সেভাবে দেখছি না। সর্বশেষ ২০১৪ সালে পানির মূল্য বাড়ানো হয়েছিল। দেশের অন্যান্য স্থানে মূল্য এর চেয়েও বেশি। উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমাদের মূল্য বাড়াতে হচ্ছে।’ সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ শাখাকে আলাদা করে ২০১০ সালের ১ আগস্ট প্রতিষ্ঠা করা হয় রাজশাহী ওয়াসা। এখন ১০৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে তা পাইপলাইনে সরবরাহ করছে ওয়াসা। নগরীতে পানির চাহিদা প্রতিদিন ১১ কোটি ৩২ লাখ লিটার। তবে ওয়াসা ৯ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে। ৭১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে এ পানি নগরীতে সরবরাহ করা হয়।

সম্প্রতি ওয়াসা পানি পরীক্ষা করে দেখেছে, পাইপের পানিতে রয়েছে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া। এ খবর জানাজানি হলে নগরবাসীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ঠিক এমন সময় পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অসন্তোষ আরও বাড়ছে। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘ওয়াসা এখন পর্যন্ত আমাদের সুপেয় পানিই নিশ্চিত করতে পারেনি। কদিন আগে জনস্বাস্থ্য বিভাগ পরীক্ষা করে ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া দেখেছে। এতে মানুষ রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। পানির মান ঠিক করার আগেই দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আমরা কর্মসূচি দেব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর