মরুর বুকে খেজুর ফলিয়ে চমক দেখাচ্ছেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা হাফেজ জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাহিদা বাড়ছে তার কোম্পানি বীনা ফুডসের খেজুরের। শুধু খেজুর নয়, তার কোম্পানির পণ্য তালিকায় আছে শুকনা ফল, জুস, মধু, মিল্ক পাউডার, নুডলস, বাদাম, ড্রিঙ্কসসহ নানা স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যসামগ্রী।
জানা গেছে, বীনা ফুডসের খেজুর সরাসরি মদিনা থেকে বাছাই করে আমদানি হওয়ায় এতে আছে মদিনার আসল খেজুরের অকৃত্রিম স্বাদ ও পুষ্টি। সৌদি আরবের আজোয়া, সাফাওয়ি, আমবার, মাবরুম, মারিয়াম, মাশরুক, মাজদুল, সুগাই ছাড়াও আরও অনেক ধরনের মানসম্পন্ন খেজুর বিশ্ববাজারে পৌঁছে দিচ্ছে বীনা ফুডস। ঢাকার দোহারের দক্ষিণ শিমুলিয়ার বাসিন্দা হাফেজ জিয়াউর রহমান ১৯৯১ সালে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে মক্কা ও মদিনায় বিভিন্ন টাওয়ারসহ বড় বড় স্থাপনার কাজ করা হয়। ছয় বছর আগে গড়ে তোলেন বীনা ইন্টারন্যাশনাল। প্রবাসে থেকে দেশের জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা থেকে বীনা ইন্টারন্যাশনাল বহুমুখী কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান বীনা ফুডসের চেয়ারম্যান হাফেজ জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিশুদ্ধ ও ফরমালিনমুক্ত খেজুর বাজারজাত করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। ভেজালের ভিড়ে খাঁটি মানের খেজুর নিয়ে আমরা আছি আমাদের ভোক্তার পাশে। বীনা ফুডস শতভাগ খাঁটি পণ্যের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ভালো না লাগলে পণ্য ফেরত দিতেও পারেন ক্রেতা।’ তিনি বলেন, ‘মদিনার খেজুরবাগানে আমাদের নিজস্ব লোক রয়েছে, যার কারণে আমাদের প্রতিটি খেজুর থাকে সেরা সাইজের বাছাইকৃত। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে সংরক্ষিত। ময়লা কিংবা অবাঞ্ছিত উপাদানের মিশ্রণমুক্ত। কোনোরকম কেমিক্যাল কিংবা প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় না। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে গ্রাহকদের জন্য প্যাকেজিং করা হয়। ঢাকার উত্তরায়ও (বাড়ি-১১৪, রোড-১৫, সেক্টর-১৪) আছে বীনা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয়।’ বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর সম্প্রতি ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব গেলে তাঁকে স্বাগত জানান বীনা ফুডসের চেয়ারম্যান হাফেজ জিয়াউর রহমান। এ সময় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে তিনি শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে বীনা খেজুর তুলে দেন। হাফেজ জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমরা খেজুরের জন্য এক নাম্বার। ওমরাহ সেবায়ও এক নাম্বার স্থানে আছি। পবিত্র মদিনা শরিফে আমাদের নিজস্ব বাগান সংরক্ষিত করা আছে। আমরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে খেজুর পাঠিয়ে থাকি। ভালো মানের খেজুরসহ খাদ্যপণ্যের জন্য বীনা ফুডস সুনাম অর্জন করেছে।’ এ প্রবাসী উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘সৌদি আরবে ওমরাহ পালনে অনেক দেশের ওপর এখনো বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। সৌদি সরকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য ওমরাহ করার সুযোগ অব্যাহত রেখেছে এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের। বাংলাদেশ থেকে আগতদের মধ্যে ৫০ শতাংশই বীনা ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে এসেছে। আগামীতে সৌদি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আমরা যাতে আরও ভালো সেবা দিতে পারি সে প্রচেষ্টা আমাদের সব সময় আছে।’ তিনি বলেন, ‘গ্রাহকদের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আমাদের রয়েছে নিজস্ব পরিবহন সংস্থা, যা সৌদি সরকারের পরিবহন সেক্টর কর্তৃক অনুমোদিত। আমাদের পরিবহন সংস্থার অধীনে রয়েছে নিজস্ব বাস, মাইক্রোবাস ও ছোট গাড়ি। থাকার সুব্যবস্থার জন্য আমাদের কাছে আছে তিন, চার ও পাঁচ তারকা হোটেল। বর্তমান বছরের সৌদি সরকার কর্তৃক জারিকৃত বিধিমালা অনুযায়ী আমরা সব সেক্টরের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ওমরাহ সেবায় বাংলাদেশে নিয়োজিত আমাদের সব ট্রাভেল এজেন্টের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’ বীনা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে কাজ করছে ঢাকার অন্যতম বৃহৎ ট্রাভেল এজেন্ট স্কাই ট্রাভেলস। প্রতিষ্ঠানটি ওমরাহ সেবাসহ বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানে ভ্রমণ সেবা দিয়ে থাকে। স্কাই ট্রাভেলসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদ চৌধুরী বলেন, ‘বীনা ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে আমরা সৌদিতে ওমরাহ পালনে যাওয়া বাংলাদেশিদের সেবা দিয়ে আসছি। সৌদিতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার জন্য বীনা ইন্টারন্যাশনালের আছে নিজস্ব যানবাহনের বহর, যা সৌদি সরকার অনুমোদিত। আমরা এবং আমাদের গ্রাহক বীনা ইন্টারন্যাশনালের সেবায় সন্তুষ্ট।’ তিনি বলেন, ‘আমরা স্কাই ট্রাভেলসের পক্ষ থেকে ২০ বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্রমণ, টিকেটিংসহ যাবতীয় সেবা দিয়ে আসছি। আমরা বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ইনসেনটিভ ট্যুর প্যাকেজ করে থাকি। আমাদের আছে নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ, যার মাধ্যমে অনলাইনেও পাওয়া যাবে যাবতীয় ভ্রমণ সেবা।’