সিলেট নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)’ গঠনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। লিখিত ওই নির্দেশ পাওয়ার পরদিনই অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাউন্সিলর ও প্রকৌশলীদের বিশাল বহর নিয়ে খুলনা ছুটে গেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। সিসিকসূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন গঠনের পর গত বছর এর আয়তন বাড়ে। ২৬ বর্গকিলোমিটারের এ নগর এখন প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটারে বর্ধিত হয়েছে। ২৬ বর্গকিলোমিটারের সিসিকে পানির চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি লিটার। কিন্তু সিসিক সর্বোচ্চ ৬ কোটি লিটারের মতো সরবরাহ করতে পারে। ফলে নগরে পানির সংকট নিত্যদিনের। এখন বর্ধিত আয়তনে পানির সমস্যা সিসিক কীভাবে সামাল দেবে তা নিয়ে আছে নানা শঙ্কা।
এ নিয়ে সিসিকের কোনো তোড়জোড়ও ছিল না। তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সিলেটে ওয়াসা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
এ লক্ষ্যে গত বুধবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামকে চিঠি পাঠিয়েছেন ড. মোমেন। চিঠিতে সিলেটের পানি সরবরাহ সমস্যা নিরসন, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কথা উল্লেখ করে ওয়াসা গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। চিঠিতে উল্লেখ আছে- ওয়াসা গঠনের বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে সরাসরি কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।সিসিকসূত্র জানান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তার অনুলিপি সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকেও দিয়েছেন। এ চিঠি পাওয়ার পরদিনই তড়িঘড়ি করে ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের’ জন্য বিশাল বহর নিয়ে খুলনায় যান মেয়র। গতকাল সকালে বিমানযোগে তাঁরা ঢাকায় যান, সেখান থেকে বিমানযোগে যান খুলনায়। রবিবার পর্যন্ত সেখানে তাঁদের থাকার কথা। সিসিকের এ বহরে মেয়র, কাউন্সিলর, প্রকৌশলীসহ ২২ জন ছাড়াও অনেকের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। অথচ এ-সংক্রান্ত অফিস আদেশে ২২ জনের কথাই উল্লেখ ছিল। কিন্তু সরকারি খরচে ৪৪ জনের বহর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিসিক-সংশ্লিষ্টরা জানান, এ সফরে খুলনা সিটি করপোরেশন কর্তৃক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিষ্কাশনের সমন্বিত প্রক্রিয়া, করপোরেশনের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম, ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পদ্ধতি, অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম প্লান্টের কার্যক্রম এবং খুলনা ওয়াসা পানি সরবরাহ কার্যক্রম পরিদর্শন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন তাঁরা।
কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার এক দিনের মধ্যেই কীভাবে ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের’ সফরের সবকিছু নির্ধারিত হয়ে গেল, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। সিসিকের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছেন, মূলত খুলনার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরে বেড়ানোর লক্ষ্যে এ সফর পূর্বনির্ধারিত ছিল। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি পেয়ে বিতর্ক এড়াতে একে ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের’ সফরে বদলে দেওয়া হয়েছে।