শিরোনাম
শনিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

দিনে অভিযান, তাই রাতে চলছে পুকুর খনন

পুকুরের মাটি চলে যাচ্ছে ট্রাক্টরে করে দূর-দূরান্তে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে ফসলের মাঠে দেদার চলছে পুকুর খনন। দিনের বেলা পুকুর খননের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান চলে, তাই রাতে চলছে খননকাজ। প্রশাসনের অভিযানের পরও বন্ধ করা যাচ্ছে না খনন। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পুকুর খননের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন। জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও খননকারীদের কাছে অসহায় কর্মকর্তারা। রাজশাহীর হোজা বিলের মাঝের রাস্তাটি কার্পেটিং করা হয় প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে। কিন্তু এ বছর বর্ষা পার হতে পারল না। এরই মধ্যে রাস্তাটি ভেঙে গেছে মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের চলাচলে। বিলের মাঝে একের পর এক খনন হচ্ছে পুকুর। আর সেই পুকুরের মাটি চলে যাচ্ছে ট্রাক্টরে করে দূর-দূরান্তে। ট্রাক্টরে বহন করা মাটি রাস্তায় পড়ে লেপ্টে যাচ্ছে। একটু বৃষ্টিতেই সেই মাটিতে গোটা সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে। আবার ভারী ট্রাক্টরের অবাধ যাতায়াতে রাস্তা ভেঙে হয়েছে চৌচির। হোজা বিলের চারদিকে যে দিকে চোখ যায় শুধু পুকুর আর পুকুর। গত শীত থেকে শুরু করে এখনো বিলের কোনো কোনো স্থানে পুকুর খনন চলছে। রাজশাহীর দুর্গাপুরের শুধু এই বিলে নয়, আশপাশের উজানখলশি, নওপাড়া, দাওকান্দিসহ বাগমারা, পবা, মোহনপুর, তানোর, পুঠিয়া ও চারঘাটে পুকুর খনন হয়েছে বা হচ্ছে। আর এতে গ্রামের নতুন পুরনো কার্পেটিং রাস্তা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি ব্যাপক হারে হারিয়েছে কৃষিজমি। আবার আগামী বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক হারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর বর্ষা মৌসুমে শুধু পুকুর খননের জন্য বাগমারায় বন্যা দেখা দেয়। এ বছরও একই হারে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে বাগমারাসহ দুর্গাপুর, পুঠিয়া, মোহনপুর, চারঘাট ও তানোরে। চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নিয়তি রানী কৈরী বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বেশ কয়েকটি ভেকু মেশিন জব্দ করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে অবৈধ পুকুর খনন। আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে। রাতের আঁধারে পুকুর খননের খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পবার একটি বিলের মাঝে অন্তত ৪০ বিঘা জায়গা দখল করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। পুকুরটি খনন করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই প্রভাবশালী নেতা।

এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং দুই নেতার দাপটে তটস্থ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। স্থানীয় আকবর হোসেন বলেন, ‘প্রতিবাদ করেছি। কোনো লাভ হয়নি। তারা আওয়ামী লীগের নেতা। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এভাবে এ উপজেলায় চলতি বছর শতাধিক পুকুর খনন হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এতে কৃষিজমি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি পুকুর খননের মাটি পরিবহনের জন্য নতুন-পুরাতন গ্রামীণ রাস্তাগুলো ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে।’

দুর্গাপুরের জুগিশো গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চোখের সামনেই খেতের জমি কেটে পুকুর হয়ে যাচ্ছে। যেন কারও কিছু বলার নেই। শুধু আওয়ামী লীগের লোকজনকে ম্যানেজ করে প্রশাসনকে কিছু টাকা দিয়ে এলেই পুকুর কাটা হয়ে যাচ্ছে রাতারাতি।’

রাজশাহীর বাগমারার মাঝিড়া গ্রামের মাজিদুল বলেন, ‘বাগমারাজুড়েই এবার পুকুরে ভরে গেছে। অন্যান্য বার প্রশাসন ব্যাপক বাধা দিত। ফলে পুকুর খনন হলেও এতটা করার সাহস পেত না। কিন্তু এবার কোনো বাধা না থাকায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই যাচ্ছেতাইভাবে পুকুর খনন হয়েছে। কেউ কিছু বলতে পারেনি। অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।’

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ জানান, পুকুর খনন বন্ধে তারা তৎপর আছেন। অনেকে গোপনে পুকুর খনন করছেন। এ কারণে তিনি তথ্য চেয়ে জনসাধারণের সহযোগিতাও চেয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর