রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ভরাট হচ্ছে রাজশাহীর তালিকাভুক্ত পুকুর

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

জলাশয় ভরাটের বিরূপ প্রভাব থেকে নগরীর পরিবেশ রক্ষায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মেগা পরিকল্পনার আওতায় ব্যক্তিমালিকানাধীন ২২টি পুকুর সংরক্ষণের তালিকা করা হয়েছে। প্রকল্পটি এখনো প্রক্রিয়াধীন। কিন্তু তালিকাভুক্ত পুকুরও এখন ভরাট হয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীর পুকুর, জলাশয় নিয়ে গবেষণা করে হেরিটেজ রাজশাহী নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের হিসাব অনুযায়ী, রাজশাহী শহরে সবচেয়ে বেশি জলাশয় ছিল ১৯৬০ সালে। তখন সংখ্যাটি ছিল প্রায় ৪ হাজার ২৩৮। ১৯৮১ সালের এক জরিপে জলাশয়ের সংখ্যা পাওয়া যায় ২ হাজার ৭১। ২০১৯ সালের জরিপে দেখা যায়, রাজশাহীতে ১২ কাঠা বা তার বেশি আয়তনের জলাশয় আছে ১২০টি। অর্থাৎ প্রতি ১০ বছরে রাজশাহী জেলায় জলাশয়ের সংখ্যা কমেছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়কারী তন্ময় সান্ন্যাল বলেন, রাজশাহীর বোয়ালিয়া ভূমি অফিসের ২০১৪ সালের জরিপ অনুযায়ী কাগজে-কলমে শহরে এক হাজার পুকুর ছিল।

বাস্তবে এই পুকুরের সংখ্যা এখন ২০০-এর নিচে নেমেছে। ফলে এখন রাজশাহী শহরের আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন। শীতের সময় শীত বেশি অনুভূত হয়, গরমের সময় বেশি গরম। তিনি বলেন, দেশের জলাধার ও পরিবেশ সংরক্ষণের আইন আছে। সে আইনের তোয়াক্কা না করে রাতের অন্ধকারে শহরের জলাশয়গুলো ভরাট করে ফেলা হচ্ছে।

২০১৯ সালের ২৩ মার্চ রাজশাহী নগরীর কাজীহাটা এলাকার একটি পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মানববন্ধন করেছিলেন। তখন রাতের অন্ধকারে পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হচ্ছিল। পুকুরটি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেগা পরিকল্পনার তালিকাভুক্ত ২২টি পুকুরের একটি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। তবে ২০২০ সালের এপ্রিলে পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হয়। এখন সেখানে কলাবাগান করা হয়েছে। একইভাবে নগরীর সপুরা এলাকায় ছয়ঘাটি দীঘিটিও রাতের অন্ধকারে মাটি ফেলে ভরাট করা শুরু হয়েছে।

রাজশাহীর পরিবেশবাদী সংগঠন হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহাবুব সিদ্দিকী ২০১০ সালে নগরীর পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেছিলেন। তখন তিন মাসের জন্য আদালত নগরীতে পুকুর ভরাটের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। এই রিটের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, কিন্তু পুকুর ভরাট চলছেই। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) বেআইনিভাবে পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে এর আগে তিনটি মামলা করেছিল। আরডিএর অথোরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে জলাশয় যে পরিমাণ আছে, তা সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উপযোগী করতে পারলেও রাজশাহী নগরীর জন্য ভালো হবে।

রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, একসময় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) একটি প্রচারপত্র বিলি করেছিল। এই প্রচারপত্রে বলা হয়, শহরের কেউ পুকুর ভরাট করতে চাইলে অনুমতি লাগবে। কেউ অবৈধভাবে পুকুর ভরাটের বিষয়ে টেলিফোনে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এখন আরডিএকে সরাসরি গিয়ে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন বলেন, কেউ পুকুর ভরাট করে সেখানে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এলে, তার অনুমোদন দেওয়া হয় না। আবার কেউ গোপনে পুকুর ভরাট করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর