শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষাব্যবস্থায় ধস বরিশালে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছে শিক্ষা বিভাগ, উদ্যোগ নেবেন জেলা প্রশাসক

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় ধস নেমেছে। সরকারি এবং খ্যাতনামা স্কুলগুলোতে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর ঢল থাকলেও বাকি স্কুলে এ বিষয়ে কেবল শূন্যতা। সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় সৃষ্টি হয়েছে এই অবস্থার। শিক্ষার্থী সমবণ্টন না হলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকতা মান হারাবে বলে দাবি করা হচ্ছে। শিক্ষা বিভাগ এই ব্যর্থতার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছে।

বরিশালের শতবর্ষী স্কুলের অন্যতম শ্রী চৈতন্য মোহন গোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয় (এসসিজিএম)। নবম ও দশম শ্রেণির জন্য এই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। এই অথচ নবম ও দশম দুই শ্রেণিতে এই স্কুলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র চারজন। এরাও আবার অনিয়মিত শিক্ষার্থী। একইভাবে মেধা তালিকার শীর্ষে থাকা বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বাণিজ্য শাখায় শিক্ষক আছেন চারজন। অথচ গত দুই বছর ধরে এই স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণিতে বাণিজ্য শাখায় কোনো শিক্ষার্থী নেই। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার্থী না থাকায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের নির্ধারিত শ্রেণির পরিবর্তে নিম্ন শ্রেণিতে অন্য বিষয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে তাদের। এতে তাদের বিষয় ভিত্তিক চর্চার মান নিম্নগামী হচ্ছে এবং শিক্ষা বিস্তারের পথ অবরুদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তাদের মতে, বিজ্ঞানসহ বিষয়ভিক্তিক শিক্ষার সম্প্রসারণের জন্য প্রতিটি স্কুলে কোঠা ভিত্তিক শিক্ষার্থী বণ্টন করার প্রয়োজন। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে সব স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার্থী সমবণ্টন করার দাবি জানান শিক্ষকরা। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, বরিশাল বিভাগে ৫৮টি সরকারি ও পাইলট সরকারি মাধ্যমিক স্কুলসহ মোট ১ হাজার ৫৮৬টি মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। অধিকাংশ স্কুলের বিজ্ঞান চর্চার অবকাঠামো, শিক্ষক এবং ল্যাব সহায়তা রয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে বিষয়ভিক্তিক শিক্ষা চর্চার অভাব রয়েছে। এ কারণে শিক্ষায় বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে মোট ৮ লাখ ১৪ হাজার ৭১৬ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯২ হাজার ৪৯৩ জন বিজ্ঞান বিভাগে, ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯১৩ জন মানবিকে এবং ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী বাণিজ্য বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। সরকারি স্কুলসহ অন্তত দেড়শ স্কুল থেকে প্রতি বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শিক্ষার্থী এলেও বেশিরভাগ স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী থাকে শূন্য। একইভাবে বড় স্কুলগুলোতে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে যাচ্ছে নিষ্প্রভ। বরিশালের মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার বৈষম্য রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর