শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা
চমেক হাসপাতাল

সরকারি ওষুধ পান না রোগীরা পাওয়া যায় ফার্মেসিতে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় আন্দরকিল্লা এলাকার আনিসুল ইসলামকে। ভর্তির পর থেকে ছিলেন পাঁচ দিন। ভর্তিকালীন হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া সব ওষুধই কিনতে হয়েছে। আনিসুল ইসলামের ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ দিন ছিলাম হাসপাতালে। কিন্তু ওষুধ মিলেছে হাতে গোনা। প্রায় সব ওষুধই কিনতে হয়েছে।’ এভাবে চমেক হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগীদের সরকারি ওষুধ না পাওয়ার ঘটনা নিত্য। সরবরাহকৃত সরকারি ওষুধ রোগীরা পান না। তবে এ ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে ফার্মেসিতে। এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই ভুক্তভোগী রোগীদের। আর্থিকভাবে সক্ষমরা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে পারলেও গরিব-অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।  

জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা।  অভিযানে ওয়ার্ডে সরবরাহকৃত ওষুধ প্রদানে দুদকের কাছে অনিয়ম ধরা পড়ে। একই সঙ্গে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে দেওয়া ওষুধ হাসপাতালের স্টোরে না থাকলেও হাসপাতালের নিচতলার ন্যায্যমূল্যের দোকানে পাওয়া যাওয়ার অভিযোগও প্রমাণ পায়। দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ হাসপাতালের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ওষুধ সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ রোগীরা না পাওয়ার অভিযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার সরকারি ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি স্টাফ আশু চক্রবর্তী ও আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. সৈয়দকে গ্রেফতার করা হয়। চুরির ঘটনায় চমেকের স্টোর অফিসার ডা. মো. হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান  বলেন, ওষুধ সরবরাহের নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে সরকারি ওষুধ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়া দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। হাসপাতালে সরবরাহকৃত ওষুধ রোগীদেরই প্রাপ্য। তাই এ ব্যাপারে কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না। রোগীর ওষুধ যেন রোগীরাই পায়, এ নীতি নিয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। 

অভিযোগ আছে, বহির্বিভাগ ও ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য বিনামূল্যে সরবরাহে বরাদ্দকৃত ওষুধের মধ্যে খুব ছোট একটি অংশই যায় রোগীর কাছে। অধিকাংশ রোগীই পান না সরকারি বিনামূল্যের ওষুধ। এখানকার কর্মচারীসহ সংঘবদ্ধ একাধিক চক্র এসব ওষুধ বাইরের ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি করে দেয়। এ কারণেই হাসপাতালের নিচতলার ন্যায্যমূল্যের ওষুদের দোকান এবং হাসপাতালের আশপাশের বাণিজ্যিক ফার্মেসিগুলোতে প্রতি মুহূর্তেই রোগীর স্বজনদের ওষুধ কিনতে দীর্ঘ লাইন থাকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর