রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
সেচের পানি না পেয়ে আত্মহত্যা

কৃষকের লিখিত অভিযোগেও সাড়া দেয়নি বিএমডিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

কৃষকের লিখিত অভিযোগেও সাড়া দেয়নি বিএমডিএ

সেচের পানি না পেয়ে আত্মহত্যা করেন দুই কৃষক। অপারেটরের অনিয়মের বিরুদ্ধে কয়েক দফা অভিযোগেও সাড়া দেয়নি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। অপারেটর শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। লিখিত অভিযোগ দিয়েও তাকে নড়াতে পারেননি কৃষকরা। দুই দফা অপারেটর শাখাওয়াতের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া কৃষকদের অভিযোগে সমর্থন জানিয়েছিলেন স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএমডিএ কর্মকর্তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে কৃষকদের সঙ্গে অন্যায় করে কোনো নলকূপ অপারেটর বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারেন না। বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত ২৩ মার্চ বিষ পান করেন রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের নবাই বটতলা নিমঘুটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি। বাড়ি ফিরে ওই দিন রাতেই মারা যান অভিনাথ। স্বজনরা ওই রাতেই রবি মার্ডিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেন।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ মার্চ রাতে মারা যান রবিও। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম ও রবি মার্ডির ভাই সুশীল মার্ডি থানায় মামলা করেন। দুটি মামলাতেই একমাত্র আসামি গভীর নলকূপ অপারেটর শাখাওয়াত হোসেন। স্বজনদের দাবি- অপারেটর খেতে পানি না দেওয়ায় বিষ পান করেন দুই কৃষক। ১১ দিন পলাতক থাকার পর ২ এপ্রিল গ্রেফতার হন শাখাওয়াত। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। গত ৬ ও ৭ এপ্রিল কারাফটকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন গতকাল বলেন, ‘ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত দুজনের শরীরে বিষ পাওয়া গেছে। পরীক্ষায় আমরা অর্গানো ফসফরাস যৌগ নামে এক ধরনের বিষ পাই। এই বিষপানেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রতিবেদনটি হাতে পেলে মামলার বিচার কার্যক্রম গতি পাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে সেচের পানি সরবরাহে গাফিলতির অভিযোগ করে আসছিলেন কৃষকরা। সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে বিএমডিএর জোন অফিসে অপারেটর শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। তাতে উল্লেখ করা হয়, অপারেটর শাখাওয়াত অকারণে দিনের পর দিন পানি সরবরাহ বন্ধ করে রেখে সেচ ও খাবার পানির সংকট সৃষ্টি করেন। একই ধরনের অভিযোগ দেওয়া হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। সর্বশেষ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-২ এর সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হাসান।

অভিযোগ উঠেছে, এই অপারেটর শাখাওয়াতের খুঁটির জোর বিএমডিএ কেন্দ্রীয় কর্মচারী লীগের (রাজ-৩০৪২) সভাপতি মেসবাউল হক এবং বিএমডিএ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিএফএম হাসনুল ইসলাম। বিএমডিএ সূত্র জানায়, ২০০২ সালে গোদাগাড়ী-২ এর আওতায় ঈশ্বরীপুর-২ গভীর নলকূপটি বসানো হয়। শর্তসাপেক্ষে সেখানে অপারেটরের দায়িত্ব পান ঈশ্বরীপুর এলাকার শাখাওয়াত। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে গভীর নলকূপটি চালাচ্ছিলেন তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শাখাওয়াত বিএমডিএ সিবিএ নেতা মেসবাউল হকের মামাতো ভাই। এ ছাড়া বিএমডিএ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিএমএফ হাসনুল ইসলাম ফারুকেরও কাছের মানুষ তিনি।

বিএমডিএ অপারেটর শাখাওয়াত হোসেন তার আত্মীয় নন বলে দাবি করেন বিএমডিএ সিবিএ সভাপতি মেসবাউল হক। তিনি বলেন, ওই এলাকায় তার বোনের বাড়ি। তাছাড়া ওই গভীর নলকূপ থেকে এলাকায় খাবার পানি সরবরাহ হয়। একবার পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছিল। ওই সময় অপারেটরকে নিয়ে রিজিওন দফতরে গিয়েছিলেন। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জিএফএম হাসনুল ইসলাম বলেন, তিনি যখন ওই এলাকায় দায়িত্বে ছিলেন, তখন সেখানে এমন অভিযোগ ছিল না। তাছাড়া অভিযোগ উঠলে সেটি দেখবেন সংশ্লিষ্ট মেকানিক-উপসহকারী প্রকৌশলী এমনকি জোন ও রিজিওন প্রধানরা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর