রাঙামাটিতে গত ১৬ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বৈসাবি উৎসব শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো মারমা পল্লীগুলোতে বিচ্ছ্বিন্নভাবে পালিত হচ্ছে জলোৎসব উৎসব। গতকালও এ উৎসব হয়েছে।
সাংগ্রাই অর্থাৎ জলখেলি বা জলোৎসব, মারমা ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘রিলংপোয়ে’। পার্বত্যাঞ্চলের ১০ ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে মারমা ও রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসব পালন করে থাকে। এটি তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব। মূলত নতুন বছরকে বরণ ও পুরোন বছরকে বিদায় জানাতে একে অপরকে জল ছিটিয়ে গ্লানি দূর করাই হচ্ছে সাংগ্রাই।
গতকাল সকাল ৯টায় ধর্মচক্র বৌদ্ধ বিহার যুবক-যুবতী সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এ সাংগ্রাই উৎসবের সূচনা করেন মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) সাধারণ সম্পাদক মংউচিং মারমা ময়না। রাঙামাটি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ব্যাচিং মারমার সভাপতিত্বে এতে রাঙামাটি ১০৪নং ঝগড়াবিল মৌজার হেডম্যান সুরঞ্জন দেওয়ান, মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিন্টুু মারমা ৫নং ওয়ার্ডের কার্বারী বুলিচায় মারমা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ফিতা কাটার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় জলোৎসবের আমেজ। বিদ্যালয় মাঠে তৈরি করা প্যান্ডেলে আগে থেকে রাখা হয় বড় বড় পানির পাত্র। নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে প্রস্তুত ছিল মারমা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের যুবক-যুবতীরা। এরপর একে অপরকে জল ছিটিয়ে চলে কাবু করার চেষ্টা। এসময় কৃত্রিম বর্ষণে উৎসবে আমেজ ছড়িয়ে পড়ে পাহাড় জুড়ে। এ জলোৎসব শুধুমাত্র যুবক-যুবতীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, উৎসবে মাতোয়ারা হয় পাহাড়ি-বাঙালি সব সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ। দিনব্যাপী চলে এ উৎসবের জোয়ার। উৎসবের আনন্দ জলে সিক্ত উৎসবস্থলের সবাই। নাচে-গানে পার হয় দিন।মারমা সম্প্রদায় ছাড়াও উৎসবে যোগ দিয়ে ছিল চাকমা, ত্রিপুরা, খিয়াং, গুর্খা, অহমিয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, উসুই, লুসাই, চাক, রাখাইন, খুমী, বমসহ বাঙালি জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার নারী-পুরুষ। শিশু, কিশোর, তরুণ, তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ সমবেত হন এ উৎসবে।
রাঙামাটির মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাইকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনপদ। পার্বত্য তিন জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নিয়ে রাঙামাটি পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। ঘটেছে ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সম্প্রীতির মিলন।