শিরোনাম
বুধবার, ১১ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

প্রস্তুত ডিম সংগ্রহকারীরা বৃষ্টির অপেক্ষা হালদায়

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র এবং বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে মা মাছ মে-জুন মাসে ডিম ছাড়ে। এখন চলছে ডিম ছাড়ার মৌসুম। তাই ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহে প্রস্তুত। এখন অপেক্ষা কেবল মুষলধারে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলের। ডিম সংগ্রহকারীদের প্রত্যাশা, মা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির শঙ্কা কেটে গেলে মা মাছ ডিম ছাড়বে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, হালদা থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে পোনা ফোটানোর জন্য সরকারি পর্যায়ে চারটি হ্যাচারি আছে। এর মধ্যে হাটহাজারী উপজেলায় তিনটি এবং রাউজানে একটি। তাছাড়া, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিএফ-পিকেএসএফের উদ্যোগেও হ্যাচারি পরিচালিত হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে ১৭৬টি মাটির কুয়া আছে। একটি কুয়ায় চার থেকে ছয় বালতি বা ৬০ থেকে ৮০ কেজি ডিম রাখা যায়। ডিমের মানের ওপর প্রতি ৪০ থেকে ৬০ কেজিতে এক কেজি রেণু উৎপাদিত হয়। এক কেজি রেণুতে গড়ে আড়াই লাখ পোনা হয়। এবার ডিম সংগ্রহে আছে প্রায় ৫০০ নৌকা এবং প্রায় ১ হাজার ২৫০ জন ডিম সংগ্রহকারী।   

ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি পড়ছে। হালদা নদীতে মা মাছের আনাগোনাও বাড়ছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় অশনি ও প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশের কারণে মা মাছ অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে না। তাই ডিম ছাড়ছে না। তবে আগামী কয়েকদিন পর পূর্ণিমা। পূর্ণিমার জো’র সময় বৃষ্টি হলে এবং পাহাড়ি ঢল নামলে ডিম ছাড়বে বলে আশা করছি। আমরাও ডিম সংগ্রহে প্রস্তুত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ডিম সংগ্রহে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ মে পূর্ণিমা। ওই দিন বৃষ্টি হলে মা মাছ ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দুই উপজেলায় চারটি হ্যাচারি প্রস্তুত আছে। তাছাড়া ডিম প্রক্রিয়াকরণে বিদ্যুৎসহ নানা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ডিম সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণ, ডিম সংগ্রহ পরবর্তী পোনা উৎপাদন এবং সচেতন করতে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।    

জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে হালদা নদীর মাছের ডিম সংগ্রহের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়ে আসছে। ২০০৭ সালে সংগ্রহ করা হয় ২২ হাজার ৩১৪ কেজি, ২০০৮ সালে ২ হাজার ৪০০ কেজি, ২০০৯ সালে ১৩ হাজার ২০০ কেজি, ২০১০ সালে ৯ হাজার কেজি, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৬০০ কেজি, ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি (নমুনা ডিম), ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৯ সালে প্রায় ৭ হাজার কেজি, ২০২০ সালে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি এবং ২০২১ সালে ৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। বেশি ডিম পাওয়া যায়, হালদা নদীর রাউজানের কাগতিয়ার আজিমের ঘাট, খলিফার ঘোনা, বিনাজুরী, সোনাইর মুখ, আবুরখীল, খলিফার ঘোনা, সত্তারঘাট, দক্ষিণ গহিরা, পশ্চিম গহিরা, অংকুরি ঘোনা, মোবারকখীল, মগদাই, মদুনাঘাট, উরকিচর এবং হাটহাজারী গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, সিপাহির ঘাট, আমতুয়া ও মার্দাশা এলাকায়।

সর্বশেষ খবর